মোঃমকবুলার রহমান,স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারীঃ
নীলফামারীর জলঢাকায় ভুট্টা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন কৃষকেরা। তিস্তা ও বুড়ি তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা ধু-ধু বালুর চর একসময় চাষাবাদের অনুপযুক্ত মনে করা হলেও এখন সেসব জমিতে সবুজের সমারোহ। এই পরিবর্তন শুধু কৃষির নয়, পুরো এলাকার মানুষের জীবনমানেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
এ বছর জলঢাকায় কৃষি বিভাগ ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১,৯৭৫ হেক্টর জমিতে। তবে কৃষকের আগ্রহ এবং উপযুক্ত পরিবেশের কারণে তা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ভুট্টা ছাড়াও আলু, শাকসবজি, পেঁয়াজ, রসুন ও মরিচসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা হয়।
বিশেষ করে চরাঞ্চলে কৃষকেরা অধিক পরিমাণে ভুট্টা চাষ করছেন। একসময় যেখানে শুধু বালুর বিস্তৃতি দেখা যেত, আজ সেখানে শস্যে ভরপুর জমি। ফসলি জমি হারিয়ে একসময় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটানো মানুষগুলো এখন স্বাবলম্বী। ভুট্টা চাষের এ সফলতার ফলে চরাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে গেছে।
১৯৯৮ সালে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় জলঢাকায় ভুট্টা চাষের সূচনা হয় মাত্র ১,২০০ হেক্টর জমি দিয়ে। ধীরে ধীরে চাষের পরিধি বাড়তে থাকে, আর এখন এটি উপজেলার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে।
তবে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চরাঞ্চলের কৃষক শাহ আলম জানান, ভুট্টা চাষ তাদের জীবনমান উন্নত করেছে, তবে সরকারিভাবে ক্রয়কেন্দ্র না থাকায় তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে ফসল কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পাশাপাশি সার ও বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল মালেক মনে করেন, ভুট্টা চাষের প্রসার শুধু কৃষকদের নয়, পুরো এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। যদি ভুট্টা ভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, তাহলে কৃষকদের লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন আহমেদ জানান, কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ভুট্টা চাষের মাধ্যমে জলঢাকায় কৃষিতে এক নতুন বিপ্লব ঘটছে, যা এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।