বুধবার, ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ই রজব, ১৪৪৭ হিজরি

দেবীগঞ্জে বালু পয়েন্টে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ ও সড়ক দূর্ঘটনা

দেবীগঞ্জে বালু পয়েন্টে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ ও সড়ক দূর্ঘটনা

বিমল কুমার রায়, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার পাকুড়িতলা থেকে সোনাপোতা সড়কটি বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ধুলাবালি দ্বারা পরিবেশ দূষন এবং নিয়ন্ত্রণহীন যান চলাচল ও নিরাপত্তাহীনতায় সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে।

করতোয়া সেতুর পশ্চিমে পাকুড়িতলায় বোদাগামী মহাসড়ক ও মাড়েয়াগামী সড়কের সংযোগস্থলে একটি বালু ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে। করতোয়া নদীর সোনাপোতা মৌজা থেকে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রাক্টরে বালু আনার ফলে পাকুড়িতলা থেকে সোনাপোতা পর্যন্ত সড়কজুড়ে বালু ও ধুলার স্তর জমে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বালুর স্তর পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় বিশেষ করে মোটরসাইকেল, সাইকেল ও ভ্যান চালকদের জন্য চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। টাকাহারা-দেবীগঞ্জ সড়কে বালুর কারণে দ্রুত রোগী পরিবহন অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানান অটোচালক সতীশ। তিনি বলেন, গতি বাড়ালেই অটো দুলতে থাকে।

পঞ্চগড়-দেবীগঞ্জ নিয়মিত যাতায়াতকারী সরকারি চাকরিজীবী রাশেদ বলেন, বালুর কারণে মোটরসাইকেলের চাকা দেবে যায়, বাইকের ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। দেবীগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শিমূল ও সাঈদের ভাষ্যমতে, প্রায় দুই কিলোমিটার ধুলোমাখা রাস্তা পার হতে গিয়ে চোখে-মুখে ধুলা ঢোকা এড়ানো যায় না। শালডাঙ্গা এলাকার বৃদ্ধ শমসের আলী জানান, নিয়মিত যাতায়াতে চোখ জ্বালা করে, কাশি শুরু হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন ধর জানান, ধুলাবালির কারণে বায়ু দূষিত হচ্ছে যার ফলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসসহ বিভিন্ন শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি।

বোদাগামী আঞ্চলিক মহাসড়কে বালু লোডের জন্য ট্রাক–ট্রাক্টর দাঁড়িয়ে থাকায় ও অবৈধ স্থাপনায় সড়কটি প্রায়ই সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। এর আগে ২৯ মে এশিয়ান হাইওয়েতে বালু লোডের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের কারণে থ্রি-হুইলার দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন ও সাত বছরের এক শিশুসহ মোট ৪জন নিহত হয়। কিছুদিন কর্তৃপক্ষের নজরদারি বিদ্যমান থাকলেও বর্তমানে আবার মহাসড়কে ট্রাক দাঁড় করিয়ে বালু লোড করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল বলেন, বালুমহালের শর্ত অনুযায়ী জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা নিষিদ্ধ হলেও পাকুড়িতলায় পরিবেশ দূষণ চলছে। তিনি ডাম্পিং ইয়ার্ড দ্রুত স্থানান্তরের দাবি জানান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ডিজার হোসেন বাদশা বলেন, রাজস্বের পাশাপাশি জননিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষা প্রশাসনের দায়িত্ব। তবে ইজারাদারের প্রতিনিধি সোলেমান হক নিয়ম মেনে কাজের দাবি করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান জানান, বালুর স্তূপ ও স্থাপনা অপসারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত