শুক্রবার, ১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
শুক্রবার, ১০ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পিআর পদ্ধতিসহ ৫ দফা আদায়ে শিক্ষকদের নিয়ে নগর জামায়াতের গোলটেবিল বৈঠকে অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান!!

 

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার চট্টগ্রাম:

প্রয়োজনীয় সংস্কার ও ফ্যাসিবাদীদের দৃশ্যমান
বিচার নিশ্চিত করে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আমিরুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত ৫ দফা দাবি ইতোমধ্যে জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের জনগণ এই দাবির প্রতি ব্যাপক সমর্থন জানিয়েছে এবং রাজপথের আন্দোলনে সরব অংশগ্রহণের মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, আমাদের সন্তানেরা রক্ত দিয়ে এই দেশকে মুক্ত করলেও এই দেশে কিছু কিছু মানুষ ও দল এখনও স্বৈরাচারী মনোবৃত্তি থেকে বের হতে পারেনি। আমরা আজই নির্বাচন চাই, কিন্তু সংস্কারবিহীন আমি আর ডামি নির্বাচন চাই না। অনেকে বলেছেন আমরা পিআর বুঝি না, ইতিপূর্বে আপনাদের নেতা-নেত্রীরাও বলেছিল কেয়ারটেকার সরকার বুঝি না, এখন বলছেন পিআর বুঝি না। পিআর বুঝতে আপনাদের আর কত সময় লাগবে?

বুধবার বিকাল ৪টায় ৫ দফা আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামের দেওয়ানবাজার দেওয়ানজি পুকুর লেনস্থ বাংলাদেশ ইসলামিক একাডেমি (বিআইএ) মিলনায়তনে শিক্ষক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকারের উচিত দেরি না করে জনগণের এই ন্যায্য দাবিগুলোকে মেনে নেওয়া। জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। এটাই জনগণের প্রত্যাশা এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার একমাত্র সমাধান।

তিনি আরও বলেন, যদি সরকার জনগণের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে এবং বিদ্যমান সংকটের সমাধান না করে, তবে জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করবে এবং প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে। জনগণের প্রতি অবিচার ও গণদাবির অস্বীকৃতি দেশের জন্য আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে, যা সরকারের জন্যও অকল্যাণকর হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতে ভারপ্রাপ্ত আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, মোহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, ড. আ ম ম মসরুর হোসাইন, প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান, প্রফেসর ড. নাজিম উদ্দিন, অধ্যক্ষ মাওলানা আবু হানিফা মুহাম্মদ নোমান, উপাধ্যক্ষ মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মুহাদ্দিস মাওলানা মাহবুবুর রহমান, প্রফেসর মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আনোয়ার হোসাইন, মীর আবুল কালাম, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ইকবাল বাহার চৌধুরী।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, কর্মপরিষদ সদস্য ডা. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, প্রফেসর মো. সাইফুল্লাহ, হামেদ হাসান ইলাহী, প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমান, শিক্ষক থানার সভাপতি অধ্যক্ষ মো. নুরুন্নবী, ড. ছাবের আহমেদ, শিক্ষক থানা সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল, আইআইউসির সেক্রেটারি ড. মাওলানা আবুল কালাম প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে নগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে দাসত্বের চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। জুলাই আন্দোলনে শিক্ষকদের অবদান ঐতিহাসিক; কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কাঙ্খিত গুণগত পরিবর্তন এখনো অর্জিত হয়নি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস জুগিয়েছেন, প্রশাসন ও সরকারের রোষানল থেকে উদ্ধার করেছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এগিয়ে এসেছিলেন। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশও স্ব স্ব ক্ষেত্রে যথাসাধ্য ভূমিকা রেখেছেন। শিক্ষকদের সেই ঐতিহাসিক ভূমিকা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। কিন্তু, আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মতো একটি দানবীয় শক্তিকে উৎখাত করতে পারলেও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কাঙ্খিত গুণগত পরিবর্তন এখনো অর্জিত হয়নি। জুলাই বিপ্লবকে টেকসই করার লক্ষেই ৫ দফা গণদাবিতে আন্দোলন করতে হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর ৫ দফা দাবিগুলো হল- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে প্রোপরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি দল ও প্রার্থীকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; বিগত ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব ‘জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির’ বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের সহায়ক’ হিসাবে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সম্পর্কিত