মঙ্গলবার, ৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি
মঙ্গলবার, ৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১১ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

দেবীগঞ্জে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, মূল আসামী গ্রেপ্তার

বিমল কুমার রায়, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্রী রত্না হত্যাকান্ডের মূল রহস্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে উদ্ঘাটন ও
মূল আসামীকে গ্রেফতারপূর্বক আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালতে আসামী মহাদেব রায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন মর্মে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যা পৌনে ৭ টায় দেবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সামুয়েল সাংমা আলোচিত রত্না হত্যাকান্ড সম্পর্কে প্রেস রিলিজ এর মাধ্যমে এসকল তথ্য জানান।

প্রেস রিলিজে তিনি বলেন, “তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রবীর চন্দ্র রায় এর নেতৃত্বে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ চৌকস টিম ‘পুলিশ সুপার’ এর দিক নির্দেশনা ও সিআইডির সহযোগিতায় অতি দ্রুততম সময়ে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা সক্ষম হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত মূল আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আদালতে অভিযুক্ত মহাদেব রায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন”।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল আনুমানিক ৬টা ৪৫ মিনিটে দেবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মাঝপাড়া(দহলা খাগড়াবাড়ী) গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে কলেজ ছাত্রী রত্নার মরদেহ উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ থানা পুলিশ।

তাৎক্ষণিকভাবে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণপূর্রবক প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে থানা পুলিশ। পরবর্তীতে ভিকটিমের পিতা রবিউল ইসলাম অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করলে মামলাটি পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২/৩৪ ধারায় রেকর্ডভূক্ত করা হয়। যাহার দেবীগঞ্জ থানার মামলা নং-২৭/১৬১, তারিখ-৩১/০৭/২০২৫।

তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিম সুলতানা আক্তার রত্না (২০) এর প্রেমিক একই ইউনিয়নের উপেন চৌকি ভাজনী পুন্ডিপাড়া এলাকার খোকা বর্মন এর পুত্র মহাদেব রায় (৩০)কে বুধবার রাত সাড়ে ১২ টায় নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর মহাদেবকে আদালতে প্রেরণ করা হলে, তিনি ৩১ জুলাই বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, “তার সঙ্গে রত্নার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে প্রেমের সম্পর্কের ভিত্তিতে বিবাহের আশ্বাস দিয়ে রত্নার সাথে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। পরবর্তীতে মহাদেব রায়ের পরিবারের পক্ষ থেকে তার অন্যত্র বিয়ে ঠিক করলে বিষয়টি জানতে পারে এবং পালিয়ে গিয়ে বিয়ের চাপ দিতে থাকে রত্না।

ঘটনার দিন মহাদেব রায় রত্নাকে দেখা করার উদ্দেশ্যে ডেকে এনে কথিত পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা বলে। কিন্তু ঘটনাস্থলে তাদের মধ্যে মতানৈক্য ও কথা কাটাকাটি হওয়ার এক পর্যায়ে মহাদেব রত্নার পরনে থাকা ওড়না গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং মৃতদেহ ধানক্ষেতে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এই সময় তিনি রত্নার মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় এবং ফোনটিকে ভেঙ্গে টুকরোটুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ওসি (তদন্ত) প্রবীর কুমার সরকার বলেন, “নিহতের ঘর তল্লাশী করে প্রাপ্ত চিরকুট এবং তাঁর ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল নাম্বারের সিডিআর (কল ডিটেইলস রেকর্ড) বের করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথোপকথন ও ঘটনার সময়কার অবস্থান বিশ্লেষণ করে হত্যাকান্ডে জড়িত মহাদেবকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে”।

 

সম্পর্কিত