রৌমারী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তঘেঁষা কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ছাট কড়াইবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মহিমা খাতুন (৪৫) বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তার জীবন যেন এক চরম দুঃখগাথার নাম। স্বামী হারা এই নারী একটি ছোট ছেলেকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। উন্নয়নের আলো যেখানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছুঁয়ে যাচ্ছে, সেখানে এই নারী এখনও বেঁচে আছেন সমাজের করুণ অবহেলায়।
মহিমার একমাত্র ভরসা প্রতিবন্ধী ভাতা, যা মাসে মাত্র ৮৫০ টাকা। এই সামান্য অর্থে ন্যূনতম চাহিদাও পূরণ হয় না তার। অনেক সময় দুবেলা খাবারও জোটে না। নেই নিজের কোনো জমি, ঘরবাড়ি বা পাকা ছাউনি। থাকেন অন্যের বাড়ির এক কোণায়, যেখানে বৃষ্টিতে ঘরে পানি পড়ে, গ্রীষ্মে গরমে দম বন্ধ হয়ে আসে।
স্মৃতি শুরু সুখে, বাস্তবতা বেদনায় মহিমা খাতুনের পিত্রালয় গুটলি গ্রামে। প্রায় ১৪ বছর আগে ছাট কড়াইবাড়ি গ্রামের দিনমজুর শফিয়ার রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। প্রথমদিকে সংসার ভালোই চলছিল। দুই বছর না যেতেই জন্ম হয় একমাত্র ছেলে মমিন বাদশাহর (বর্তমানে বয়স ৭ বছর)। কিন্তু হঠাৎ শফিয়ার রহমান অসুস্থ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। তখন থেকেই শুরু হয় মহিমার জীবনের করুণ অধ্যায়।
স্বামীহারা এই নারী কোনো কাজ করতে পারেন না। ভাষা বলতে না পারা ও শুনতে না পারার কারণে তার যোগাযোগের একমাত্র ভরসা ইশারা। নিজের যেকোনো প্রয়োজন বুঝাতে তাকে হিমশিম খেতে হয়। সন্তানকে নিয়েই তার সব চিন্তা কোথায় থেকে খাবার আসবে, কীভাবে পড়াশোনা চলবে, কিভাবে বাঁচবে এই পরিবার। প্রতিদিনই বেঁচে থাকার সংগ্রাম মহিমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার দেবর আব্দুল বাতেন ও ভাতিজা বাবুল। তিনিও নিজে একজন দরিদ্র কৃষি শ্রমিক। নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও তিনি মহিমা ও তার ছেলেকে যতটুকু পারেন সাহায্য করে যাচ্ছেন।
দেবর আব্দুল বাতেন বলেন, আমরা নিজেরা টানাটানিতে থাকলেও এই অসহায় প্রতিবন্ধী মহিমাকে ফেলে রাখা যায় না। আমার ভাইয়ের বউ। তবে আমাদের সাহায্য তাদের প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না।
সহযোগিতা ও পুনর্বাসন দরকার এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। কেউই বড় সাহায্য দিতে পারে না। প্রতিবন্ধী মহিমার জন্য এখন প্রয়োজন একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল, খাদ্য সহায়তা, ছেলের লেখাপড়ার ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সহায়তা। স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি ও সরকারি-বেসরকারি সাহায্যই হতে পারে এই পরিবারের জন্য আশার আলো।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজের সচেতন মহলের দাবি, সরকারি বিভিন্ন পুনর্বাসন ও সহায়তা প্রকল্পের আওতায় এনে মহিমা খাতুন ও তার ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখা হোক। সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসা উচিত।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুদ্দিন জানান, ঘর তোলার জন্য সহযোগীতা করা হবে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, আমরা তাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে।
 
				 
											











