রবিবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
রবিবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ঠাকুরগাঁওয়ের বুড়ি ও শুক নদীতে মাছ ধরার উৎসব

মোঃ সাইফুল ইসলাম,বালিয়াডাঙ্গী ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:

প্রতি বছরের মতো ন্যায় এবারও ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুক নদের বুড়ির বাঁধে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার উৎসব। শীতের আগমনী বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাঁধের জলকপাট খুলে দেওয়ায় ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় এবং দিনাজপুর জেলার হাজার হাজার মানুষ এই উৎসবে যোগ দিতে ভিড় জমিয়েছেন। এটি এখন আর শুধু মাছ ধরার আয়োজন নয়, পরিণত হয়েছে উত্তরবঙ্গের এই তিন জেলার মানুষের এক আনন্দময় মিলনমেলায়।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) ভোর থেকেই ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ও চিলারং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এই বাঁধ এলাকায় পলো, খেওয়া জাল, চাবিজাল, ঠেলা জালসহ মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম নিয়ে নেমে পড়ে মানুষ। বাঁধের জল কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মাছ ধরার এক প্রতিযোগিতা। ভেলা বা ছোট নৌকায় চেপেও অনেকে মাছ শিকারে অংশ নেন। মাছ ধরার এই দৃশ্য দেখতে বাঁধের দু’পাশে উৎসুক জনতার ঢল নামে। এই মাছ ধরার উৎসবকে ঘিরে বাঁধের দুই পাড়ে মেলা বসেছে। মেলার মাঠজুড়ে নাগরদোলা, চরকি এবং শিশুদের জন্য নানা ধরনের খেলনা ও মুখরোচক খাবারের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা।

তবে উৎসবের আমেজ শুধু বাঁধের পাড়েই সীমাবদ্ধ নয়। বুড়ির বাঁধের আশেপাশে প্রত্যেক বাড়িতে এখন আনন্দের জোয়ার। উৎসব উপলক্ষে এই সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে আত্মীয়-স্বজনরা মেহমান হতে আসেন। গ্রামগুলোতে তখন ঘরে ঘরে চলে উন্নত খাবার পরিবেশন ও আপ্যায়নের পালা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই উৎসব তাদের কাছে শুধু মাছ ধরার আয়োজন নয়, বরং এটি একটি সামাজিক পুনর্মিলনীর উপলক্ষ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে কৃষিজমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার জন্য ১৯৫১-৫২ সালের দিকে শুক নদীর ওপর বুড়ির বাঁধ সেচ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। পরে এটি জলকপাট (স্লুইসগেট) হিসেবে পরিচিতি পায়। বছরজুড়ে এই জলকপাটে পানি আটকে রাখা হয় এবং মৎস্য অধিদপ্তর এখানে বিভিন্ন জাতের দেশি মাছের পোনা অবমুক্ত করে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ (আকচা ও চিলারং ইউপি) মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত প্রায় ৫০ একর বিস্তৃত এই এলাকার দেখভাল করে। সারা বছর এখানে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও, প্রতি বছর কার্তিক মাসের শুরুতে সেচের জন্য বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর তখন থেকেই শুরু হয় এই উৎসব। হাজারো মানুষ এসেছে মাছ ধরতে বুড়ির বাঁধের পানিতে সাধারণত শোল, বোয়াল, বাইম, শিং, ট্যাংরা, পুঁটি, টাকি, খলসে, মলা, চিংড়িসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায়। তবে কিছু মাছ শিকারি হতাশাও প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু লোক আগে থেকেই রিং জাল ও কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছ আটকে রাখে, যার ফলে সাধারণ মানুষ প্রত্যাশিত পরিমাণে মাছ পাচ্ছেন না। তবে এই অভিযোগ সত্ত্বেও উৎসবের আমেজে কোনো কমতি নেই। বুড়ির বাঁধের পানিতে সাধারণত শোল, বোয়াল, বাইম, শিং, ট্যাংরা, পুঁটি, টাকি, খলসে, মলা, চিংড়িসহ নানা প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায় ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ গোলাম যাকারিয়া বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মাছ ধরা উৎসব সুষ্ঠুভাবে চলছে। মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে ঠাকুরগাঁওয়ের বুড়ির বাঁধ এখন উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে এক বড় বিনোদন এবং সামাজিক যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে পরিণত হয়েছে

সম্পর্কিত