মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টার:
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে দারিদ্র্যমুক্ত বহুমুখী সমবায় সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন প্রতারিত সদস্যরা। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাকের মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সোমবার (১৩ অক্টোবর ২০২৫) সকালে চিলমারী উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে তিন হাজারেরও বেশি ভুক্তভোগী অংশ নেন। তাঁরা দাবি জানান— নিজেদের কষ্টার্জিত সঞ্চিত অর্থ ফেরত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার।
বক্তারা জানান, ২০০৭ সালের জুন মাসে উপজেলার রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ নতুনবাজার এলাকায় ‘দারিদ্র্যমুক্ত বহুমুখী সমবায় সমিতি’ নামে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। নিবন্ধন পাওয়ার পর থেকেই তারা উচ্চ লভ্যাংশের প্রলোভন দেখিয়ে সদস্যদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে। প্রাথমিকভাবে কিছু অর্থ ফেরত দিলেও পরে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সমিতিটি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা ফেরত না দেওয়ায় তারা এখন পথে বসেছেন।
রমনা ইউনিয়নের ছকিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি ভিক্ষা করে সাড়ে ছয় লাখ টাকা রেখেছিলাম সমিতিতে। এখন কিছুই পাচ্ছি না, পাগল হয়ে যাচ্ছি।”
এ সময় আরও অনেক সদস্য তাঁদের ক্ষতির বিস্তারিত তুলে ধরেন— রিপন মিয়া ২ লক্ষ ৩০ হাজার, জয়ন্ত রায় জয়েন ১ লক্ষ ২২ হাজার, এরশাদুল হক ৮০ হাজার, সুফিয়া দেওয়া ১ লক্ষ ২৮ হাজার, জেলেখা বেওয়া ১ লক্ষ ৪৮ হাজার, কসভান বেওয়া ৬০ হাজার, এবং মিম আক্তার ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা জমা দেন বলে জানান তাঁরা।
প্রতারিতদের তিন দফা দাবি:
১. আত্মসাৎ করা টাকা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।
২. দায়ীদের বিরুদ্ধে সমবায় আইন অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. ভবিষ্যতে এমন প্রতারণা রোধে প্রশাসনিক তদারকি জোরদার করতে হবে।
দারিদ্র্যমুক্ত সমবায়ের সম্পাদক নুর আলম বলেন, “পরিচালক আনিসুর রহমান আনিস ও মিল্টনসহ ১৭ কর্মচারী সব কাগজপত্র নিজেদের দখলে রেখেছেন, তাই আমরা হিসাব দিতে পারছি না। তবে সাতটি দলিলের বিপরীতে প্রায় ৯৫ লক্ষ টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
তবে প্রধান পরিচালক আনিসুর রহমান আনিসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কর্মসূচি শেষে “রক্ত-ঘামে উপার্জিত টাকা হারানো ভুক্তভোগী পরিবারবর্গ” ব্যানারে অংশগ্রহণকারীরা ইউএনও’র কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে দ্রুত অর্থ ফেরত ও আইনি পদক্ষেপের দাবি জানান।