রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতির বিরোধিতায় মার্কিন পররাষ্ট্র মুখপাত্রের পদত্যাগ

বিশ্ব ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরোধিতা করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরবি ভাষার মুখপাত্র হালা রাহারিত পদত্যাগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিঙ্কডইনে এক পোস্টে এ তথ্য নিজেই নিশ্চিত করেছেন তিনি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ নিয়ে দেশটির গাজা নীতি ইস্যুতে পদত্যাগ করা কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়ালো তিনে।

লিঙ্কডইন পোস্টে হালা রাহিত বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মানজনক পদে ১৮ বছর চাকরি করার পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে আমি পদত্যাগ করছি। গাজা ইস্যুতে মার্কিন সরকারের নীতিই এর কারণ।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালের আগপর্যন্ত মন্ত্রণালয়টির অন্তর্ভুক্ত সংস্থা এবং আরব বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাজ করা দুবাই রিজিওনাল মিডিয়া হাবের উপপরিচালক ছিলেন হালা রাহারিত।

পরে ২০০৬ সালে রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মকর্তা এবং আরবি ভাষার মুখপাত্র হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগ দেন তিনি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করা কর্মকর্তাদের মধ্যে হালা রাহারিতই প্রথম নন। গত মার্চে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার ব্যুরোর কর্মকর্তা অ্যানেলি শেলিন একইভাবে পদত্যাগ করেছিলেন। তার আগে গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তারিক হাবাশের পদত্যাগের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু এ ইস্যুতে প্রথম যে মার্কিন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন, তার নাম জশ পল। গত অক্টোবরে চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়া জশ পলও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে নির্বিচারের গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে হত্যা করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন (হামাস)। পাশাপাশি জিম্মি হিসেবে সংগঠনটি ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জনকে।

এ হামলার জবাবে সেই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত ছয় মাস ধরে চলমান সেই স্থল অভিযান ও বিমান হামলায় কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। এতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। যাদের অধিকাংশই শিশু, নারী ও বেসামরিক নাগরিক।

তবে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুতিয়ালিতে গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অস্থায়ী বিরতি ঘোষণা করেছিল হামাস-আইডিএফ।

সেই বিরতির সময় নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে ১০৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে থেকে দেড়শো জনকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়েছিল ইসরায়েলও।

ওই বিরতি শেষ হওয়ার পর গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছিল মধ্যস্থতাকারী তিন দেশ। চলতি বছর রমজান মাস থেকে তা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, মূলত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আপত্তির কারণে তা আর ফলপ্রসূ হয়নি। ফলে হামাসের কব্জায় থাকা বাকি ১৩২ জন জিম্মির ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও অজানা।

এ দিকে ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরায়েলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্রের ভূমিকা পালন করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্বের একমাত্র এই ইহুদি রাষ্ট্রকে সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সহায়তা দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন।

৭ অক্টোবর হামলার পরও একনিষ্ঠভাবে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র, অর্থ, রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সহায়তা দিচ্ছে দেশটি ।

গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা হ্রাসের জন্য ইসরায়েলকে শুরু থেকেই ওয়াশিংটন চাপ দিয়ে এলেও সে চাপকে আমলে নিচ্ছে না ইসরায়েলের কট্টরপন্থী লিকুদ পার্টির নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।

অন্যদিকে, ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক আপত্তি ও সমালোচনা সত্ত্বেও ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

সম্পর্কিত