বিশেষ প্রতিবেদক: সারাদেশে সক্রিয়ভাবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জোরদার করার উদ্দেশ্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী সংস্থা ‘মনের বন্ধু’-এর যৌথ আয়োজনে “Leveraging ICT for Advancing Mental Health Services- মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অগ্রগতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার” শীর্ষক পলিসি রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সভাকক্ষে এ পলিসি রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিসিসি নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড- ১) রণজিৎ কুমারের সভাপতিত্বে কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি। এ ছাড়াও, সে সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন, এবং বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ড. বুশরা বিনতে আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে এখন সাড়ে ৫ থেকে ৬ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছেন। এটির অ্যালগরিদম এমনভাবে করা হয়েছে যে আমাদের তরুণ ও কিশোর ব্যবহারকারীরা এমনভাবে প্রভাবিত হচ্ছে যে মনের অজান্তেই তারা বিভিন্নভাবে নেতিবাচক কন্টেন্টে আসক্ত হচ্ছে। তাই এ ধরনের কন্টেন্টের প্রতি আসক্তি কমাতে অর্থসহায়তার নামে লোকদেখানো কার্যক্রমের পাশাপাশি আসক্তিমুক্তির ক্ষেত্রে তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইচ্ছে করলেই পুরো পৃথিবীর সকল নেতিবাচক কন্টেন্ট একসঙ্গে মুছে ফেলে সাইবার বুলিং নিশ্চিহ্ন করতে পারবো না। কিন্তু সকলকে মেন্টালহেলথ, ডিজিটাল ও এআই লিটারেসি নিয়ে সচেতন করতে পারবো। এজন্য সরকারি-বেসরকারি খাত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মিডিয়াকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। এ সময়, উচ্চপ্রযুক্তির মেন্টাল হেলথ জিপিটি তৈরি এবং এর মাধ্যমে দেশের ১৪ হাজার কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক ব্যবহার ও ৩৫০ জন সংসদ সদস্যকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
কনফারেন্সে ইউএনডিপি-র রিসার্চ অ্যানালিস্ট ফয়সাল বিন মজিদ পুরো প্রকল্পটিকে উপস্থাপন করে বলেন, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতায় মনের বন্ধু (গত আগস্ট ২০২৩ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত) বাংলাদেশের স্বনামধন্য দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মেন্টাল হেলথ এবং সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট’ সংক্রান্ত একটি পাইলট প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। এর পাশাপাশি এই প্রকল্পের মাধ্যমে আট শতাধিক শিক্ষার্থীকে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য টেকসই পরিবেশ এবং সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ড. বুশরা বিনতে আলম তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, শহরাঞ্চলের পাশাপাশি আমাদের গ্রামাঞ্চলের দিকেও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এমনকি যারা প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত তাদের কাছে কীভাবে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া যাবে তাঁর জন্য কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে হবে।
‘মনের বন্ধু’-র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদা শিরোপা বলে, মনের বন্ধু একটি টেকনোলজি-বেজড মানসিক স্বাস্থ্য স্টার্ট আপ। ইউএনডিপি বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা গত নয় মাসে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘আমিই মনের বন্ধু – মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ’ আয়োজন করেছি যার মাধ্যমে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার বিস্তার ও সাইবার বুলিং এর বিরুদ্ধে রেজিলিয়েন্স তৈরি হয়েছে। আমরা চাই সকলের সহযোগীতায় বাংলাদেশ সরকারের ‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য বাস্তবায়ন পরিকল্পনা (২০২৪-২০২৯)’ এর আলোকে একটি রেজিলিয়েন্ট ও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে।
অনুষ্ঠানটিতে পিটিআইবি প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল মোঃ আবু সাঈদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র গভর্নেন্স স্পেশালিস্ট শীলা তাসনিম হক, পিটিআইবি প্রোজেক্ট ম্যানেজার রবার্ট স্টোলম্যান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি’র অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীসহ নানা দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।











