বিমল কুমার রায়,পঞ্চগড় জেলাপ্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে এক ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের পরই প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিহত প্রসূতি কৃষ্ণা রানী উপজেলার ৯ নং দেবীডুবা ইউনিয়নের প্রেমবাজার এলাকার ধর্ম নারায়ন এর স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে ৩ টায় দেবীগঞ্জ পৌর শহরের করতোয়া সেতু টোল পাড় সংলগ্ন দেবীগঞ্জ স্কয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কৃষ্ণার সিজারিয়ান অপারেশন হয়। অপারেশন এর মাধ্যমে কৃষ্ণা কন্যা সন্তানের মা হন। কিনতু এরপরেই তাঁর বিভিন্ন প্রকার শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় এবং ঐ ক্লিনিকেই রাত ২ টা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন থাকেন। পরবর্তীতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রংপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
জানা যায়, কৃষ্ণা রানীর আগে থেকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল বলে জানা গেছে কিন্তু গর্ভকালীন তেমন কোন শারীরিক জটিলতা ছিল না। নরমাল ডেলিভারির সময় ছিল আজ (শুক্রবার)। তবে গতকালই (বৃহস্পতিবার) সিজারের জন্য তাকে দেবীগঞ্জে স্কয়ার ক্লিনিকে নিয়ে যায় তার স্বামী। সাথে ছিলেন শাশুড়ী। সেখানে প্রাথমিক পরীক্ষানিরীক্ষার পর বিকাল ৩টার পর অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় কৃষ্ণাকে। সিজারিয়ান অপারেশনটি সম্পন্ন করেন ডা. শিখা মনি।
পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অসাবধানতা, ডাক্তার না থাকা ও জরুরী অবস্থায় পর্যাপ্ত সেবা প্রদানে সক্ষমতা না থাকায় প্রসূতি নারীর মৃত্যু হয়েছে। চার বছর আগে এই দম্পতির বিয়ে হয়। এটাই তাঁর ১ম সন্তান দান।
কৃষ্ণা রানীর শাশুড়ী কনিকা রায় বলেন, বউমাকে বেডে দেওয়ার পর থেকে বুক ছটফট করছে এবং পায়ে ব্যাথার কথা বলতে থাকে। আমি বারবার ক্লিনিকে জানানোর পরও ডাক্তার আসেননি। শুধু নার্স এসে দেখে যাচ্ছিলেন। আর স্যালাইন ইঞ্জেকশন চলছিল।
কনিকা রায় আরো বলেন, বউমার সন্তান হচ্ছে না দেখে গত তিন বছর কত জায়গায় যে চিকিৎসা করিয়েছি। আমার বউমার মতো মেয়ে হয়না। এখন নাতনি আছে কিন্তু আমার বউমা নেই। সার্জারির পরে অস্বাভাবিক ভাবে পেট ফুলে উঠেছিল বলেও জানান তিনি।
কৃষ্ণা রানীর স্বামী ধর্ম নারায়ণ বলেন, আমার স্ত্রীর বিয়ের আগে থেকে একটু শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। তবে গুরুতর কোন শারীরিক জটিলতা ছিল না। কাল পরীক্ষানিরীক্ষার পর ডাক্তার বলল রক্ত স্বল্পতা আছে। পরে রক্ত জোগাড় করি। সিজারের পর থেকে বউ সমস্যার কথা বলছিল। রাতে অবস্থা বেশি অবনতি হওয়ায় রংপুরে নেওয়ার পথে নীলফামারী পৌঁছানোর পর বউ মারা যায়।
এইদিকে সকালে সরেজমিন কৃষ্ণার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড় দেখা যায়। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সন্তান রেখে অকালে মৃত্যুর ঘটনাটি কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
এই বিষয়ে দেবীগঞ্জ স্কয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের মুঠোফোনে বলেন, “বিকেলে আপনারা ক্লিনিকে আসেন। সাক্ষাতে বিস্তারিত সব বলব”।
এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন ধর বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং আমি নিজেই ওই ক্লিনিকে গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।
সিভিল সার্জন ডা. মো: মিজানুর রহমান বলেন, “বিষয়টি এখনো আমি অবগত নই। এখন জানলাম, আমি অতি দ্রুত স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করবো।
উল্লেখ্য, এর আগেও একই ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া অন্তত তিনটি নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। প্রতিটি শিশু প্রসবের পরই শারীরিক জটিলতা শুরু হয় এবং তারপর রংপুর কিংবা ঠাকুরগাঁওয়ে রেফার্ড করা হয়েছিল।