বিমল কুমার রায়, দেবীগঞ্জ (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় প্রথমবারের মতো রপ্তানিযোগ্য নিরাপদ সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘Good Agricultural Practice’ (GAP) পদ্ধতিতে করলার চাষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে রপ্তানিযোগ্য সবজি উৎপাদন করাই এ চাষাবাদের মূল উদ্দেশ্য।
“প্রোগাম অন এগ্রিকালচারাল এ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনরশিপ এ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ” প্রকল্পের আওতায় কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান এবছর পরীক্ষামূলকভাবে এক একর জমিতে GAP পদ্ধতিতে করলা চাষ করছেন। GAP পদ্ধতির আওতায় নিরাপদ খাদ্য, স্বাস্থ্যসচেতন উৎপাদন প্রক্রিয়া ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করে পরিচালিত হচ্ছে এই চাষাবাদ।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে উপজেলার সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের মাঝাপাড়া এলাকায় কৃষক মোস্তাফিজুর রহমানের সবজি ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, GAP পদ্ধতি করলার ক্ষেতটি চারপাশে নেট দিয়ে ঘিরে নিরাপদ রাখা হয়েছে, যাতে গবাদিপশু বা পাখির আক্রমণ ঠেকানো যায়। নেটের গায়ে সচেতনতামূলক বার্তা টানানো হয়েছে। ক্ষেতের ভেতরে পোকামাকড় দমনে ব্যবহৃত হয়েছে হলুদ ফাঁদ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শ্রমিক কাজ করছেন—মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও মাথা ঢেকে রাখা হয়েছে। প্রতিটি ধাপে GAP-এর নির্দেশনা মেনে চাষাবাদ চলছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়,
নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে GAP পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা, উন্নত বীজ ব্যবহার, পানি অপচয় রোধ, নির্ধারিত মাত্রায় সার-কীটনাশক প্রয়োগ, ক্ষেতের পরিচ্ছন্নতা এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা- সবই এর আওতাভুক্ত।
কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা গতানুগতিক যে কৃষিকাজ করি সেটার থেকে এটা কিছুটা ভিন্ন। এর আগে যখন কৃষি করতাম তখন কোন পরীক্ষা না করেই সার দিতাম। এই পদ্ধতিতে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে, পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। আগে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতাম। মানব দেহের যাতে কোন ক্ষতি না হয় এজন্য এখন বায়োপেস্টিসাইড ব্যবহার করতেছি। সকল প্রকার স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনেই আমরা চাষাবাদ করতেছি। GAP পদ্ধতিতে চাষ করায় অন্যান্য বারের তুলনায় ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি এই ফসল বাহিরে রপ্তানি করতে পারবো।
এবিষয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ নাঈম মোর্শেদ বলেন, প্রতি বছর আমাদের দেশে ফল ও সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন সময় এসেছে ফল ও সবজি বিদেশে রপ্তানি করার। ফল ও সবজি বিদেশে রপ্তানি করার ক্ষেত্রে যে জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো Good Agricultural Practice (GAP) পদ্ধতি অনুসরণ করা। এই পদ্ধতি অনুসরণ করা চ্যালেঞ্জ হলেও আমাদের কৃষকরা অত্যন্ত সহজ সরল এবং পরিশ্রমী। তাদের বুঝিয়ে বললে তারা যেকোন মডার্ন প্রযুক্তি সহজেই গ্ৰহন করে। দেবীগঞ্জে কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান পার্টনার প্রকল্পের আওতায় এক একর জমিতে GAP পদ্ধতি অনুসরণ করে করলা চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা এবং দিকনির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। সর্বোপরি GAP পদ্ধতির যত নীতিমালা আছে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে যাতে এই ফসল দেশের বাহিরে রপ্তানি করা যায়।











