রবিবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
রবিবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

তারাকান্দায় জেলা পরিষদের নিজস্ব জমি দখল করে দোকান নির্মাণ: প্রশাসন নীরব, দখলদার বেপরোয়া!

 

নিউজ ডেস্ক:
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কাকনী ইউনিয়নের ধ্বলি বাজার সংলগ্ন এলাকায় জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এক খাস ভূমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বাগুন্দা গ্রামের সাবেক শ্রমিক লীগ সদস্য আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, ধ্বলি বাজারের পাশেই জেলা পরিষদের একটি পুকুর রয়েছে। প্রায় দেড় যুগ আগে পুকুরের একপাশ ভরাট করে সেখানে হাফ বিল্ডিং দোকানঘর নির্মাণ করেন আব্বাস আলী। সেই থেকে তিনি দোকানগুলো ভাড়া দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। অথচ, তিনি জেলা পরিষদ থেকে ওই জমি লিজ নেননি—দখল করে অবৈধভাবে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

দোকান ভাড়া নেওয়া ব্যবসায়ী আনারুল হোসেন, যিনি ধ্বলি বাজারের পার্শ্ববর্তী গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে, জানান—

“প্রায় ১০-১১ বছর ধরে আমি আব্বাস আলীর কাছ থেকে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছি। শুরুতে ১৫ হাজার টাকা জামানত দিয়েছিলাম, এখনো মাসে ৮৫০ টাকা ভাড়া দিচ্ছি।”

এদিকে, দখলদার আব্বাস আলীর ছেলে আরিফ (২৪) এর বিরুদ্ধেও রয়েছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস। গত সরকারের আমলে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় পুলিশ তাকে আটক করেছিল।

স্থানীয়রা আরও জানান, চলতি মাসের ৮ তারিখে আব্বাস আলীর অন্য ছেলে উসমান বাদী হয়ে এলাকার শ্রমিকদল নেতা হানিফ ও বিদ্যুৎ নামের দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে “মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে” একটি মামলা দায়ের করেন। এতে এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, জেলা পরিষদের পুকুরের পাশে গড়ে ওঠা ওই দোকানঘরগুলো এখন একটি ছোট মার্কেটের রূপ নিয়েছে। ব্যবসা চলছে পুরোদমে। অথচ সরকারি এই ভূমির কোনো লিজ বা অনুমোদনের কাগজপত্র নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আব্বাস আলী ও তার ছেলেরা এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে এবং কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

ধ্বলি এলাকার বাসিন্দা ও সমাজসেবক সুজন বলেন,

“এই জায়গাটা জেলা পরিষদের খাস সম্পত্তি। আমরা নিজের চোখে দেখেছি কিভাবে পুকুর ভরাট করে দোকান তোলা হয়েছে। আমি উপজেলা প্রশাসনকে ফোনে জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় স্থানীয়দের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তাদের প্রশ্ন—
সরকারি জমি দখল করে দোকান বানিয়ে কেউ কিভাবে এত বছর ধরে ব্যবসা চালাচ্ছে? প্রশাসন কি আসলেই অক্ষম, নাকি কেউ তাদের ম্যানেজ করে রেখেছে?

এ ব্যাপারে তারাকান্দা উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“বিষয়টি আমরা জানি। জেলা পরিষদের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে কেউ যদি অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে, সচেতন নাগরিক সমাজ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলেন,

“সরকারি জমি দখল করে ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা যেমন অপরাধ, তেমনি প্রশাসনের চুপ থাকা আরও ভয়াবহ। এসব দখলবাজদের আইনের আওতায় আনা না গেলে ভবিষ্যতে আরও অনেকে সরকারি সম্পদ দখলের সাহস পাবে।”

এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কি সত্যিই নড়েচড়ে বসে—নাকি জেলা পরিষদের এই সরকারি জমি দখলের ঘটনা আরও অনেক দিনের মতো ধামাচাপা পড়েই থাকবে!

সম্পর্কিত