বুধবার, ২৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
বুধবার, ২৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

তদবিরে সাড়া না দেওয়ায় এসি ল্যান্ডকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ লিখে ফেসবুকে পোস্ট

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা:  কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর বাগমারা বিল থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করায় চারজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান। এতে তাঁর ওপর ক্ষেপে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়েছেন নাগেশ্বরী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম ওরফে ইসরায়েল।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কারাদণ্ড পাওয়া বালু ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য এসি ল্যান্ডের কাছে তদবির করেন কাউন্সিলর আশরাফুল। এতে সাড়া না দিয়ে দণ্ড দেওয়ায় তিনি ক্ষেপে যান। পরে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সাত কর্মদিবসের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসর দুর্নীতিগ্রস্ত বদমেজাজি নাগেশ্বরী উপজেলার এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

এদিকে ওই পোস্টের স্ক্রিনশট ব্যবহার করে এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান তাঁর ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘অবৈধ বালু তোলা ঠেকাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা যদি অপরাধ হয়, তবে আমাকে কালই প্রত্যাহার করুন। গরিবের জমি রক্ষায় পাশে দাঁড়ানো যদি দোষ হয়, আমাকেও দোষী মানুন। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে যদি আমি বদমেজাজি হই, তবে বিচার করুন।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দুটি অনেকের নজরে এসেছে। নাগেশ্বরীর একাধিক ব্যক্তি লিখেছেন, একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে সাবেক এই কাউন্সিলর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন পোস্ট দিয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নাগেশ্বরী পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাগমারা বিলে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র। অভিযোগ পেয়ে ২০ এপ্রিল বেলা তিনটার দিকে অভিযান পরিচালনা করেন এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বালু ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম (৩৪), আলমগীর হোসেনকে (৩৭) ৩ দিন এবং আবদুল লতিফ (৩৮) ও মনিরুজ্জামানকে (৪০) বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন অপরাধে ৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ সময় বালু তোলার পাইপ ভেঙে দেওয়া হয়।

সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম ফেসবুকে পোস্ট করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে আমি ঘটনাস্থলে গেলে এসি ল্যান্ড আমাকে লাঞ্ছিত করেন। বিষয়টি ডিসি, ইউএনওকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করি। ইউএনও মহোদয় বিষয়টি জানার পর আমার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন।’

এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান বলেন, সাবেক কাউন্সিলরকে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে যে অভিযোগটি করেছেন, তা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় ওই সাবেক কাউন্সিলর বিলের ওপার থেকে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দিতে বলেন। সেই সঙ্গে তিনি ড্রেজার না ভাঙার জন্য অনুরোধ করে বলেন, ‘আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দিন। ড্রেজার কিছুক্ষণ পর সরিয়ে নেওয়া হবে। সেগুলোর ক্ষতি করিয়েন না।’ কিন্তু উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনগণ ড্রেজার ও পাইপ ভেঙে ফেলেন। এতেই তিনি ক্ষুব্ধ হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা চলে আসেন।

সম্পর্কিত