সোমবার, ২০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
সোমবার, ২০শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৮শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

চাকরি নয়, লেবু চাষেই সফল কাওসার আলম

চাকরি নয়, লেবু চাষেই সফল কাওসার আলম

চাকরি নয়, লেবু চাষেই সফল কাওসার আলম  বিমল কুমার রায়, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রিগঞ্জ ইউনিয়নের বানেশ্বর পাড়া গ্রামের বাসিন্দা কাওসার আলম (৪২)। কারমাইকেল কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে মাস্টার্স পাস করা এই শিক্ষিত যুবক আজ নিজ গ্রামের মাটিতেই লেবু চাষ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী ও অনুপ্রেরণার নাম।

  • পড়াশোনা শেষে প্রত্যাশা অনুযায়ী চাকরি না পেলেও তিনি হতাশ না হয়ে নতুন পথ বেছে নেন। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প নিয়ে তিনি নিজের বাড়ির সংলগ্ন সোয়া তিন বিঘা জমিতে প্রায় চার শতাধিক লেবুর চারা রোপণ করেন। শুরুতে ছিল অনিশ্চয়তা, তবে যত্ন ও পরিশ্রমের ফল তিনি খুব দ্রুতই পান। মাত্র ৮-৯ মাসের মধ্যেই বাগানে ফল আসা শুরু হয়। প্রথমদিকে প্রতি গাছ থেকে ৫ শত লেবু সংগ্রহ করা গেলেও বর্তমানে প্রতি ১৫ দিন অন্তর তিনি প্রায় ১৪-১৫ হাজার লেবু বিক্রি করছেন।

    ঢাকার কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকে লেবু কিনে নিয়ে যান। প্রতি হাজার লেবু ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় তিনি প্রতি বিঘায় বছরে গড়ে প্রায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। স্বল্প পুঁজিতে এত ভালো মুনাফা পাওয়ায় কাওসারের এই উদ্যোগ আজ পুরো বানেশ্বর পাড়া গ্রামের অর্থনীতিতে নতুন গতি এনে দিয়েছে।

    এখন এই গ্রামে প্রায় ৩০ জন কৃষক ছোট-বড় লেবু বাগান করেছেন। আগে ধান ও ভুট্টা চাষ ছিল প্রধান আয়ের উৎস, এখন সেই জায়গায় লেবু চাষ সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। গাছ লাগানোর পর নিয়মানুযায়ী পরিচর্যা করলে একেকটি গাছে টানা ৭-৮ বছর ধরে লেবু পাওয়া যায় এবং প্রতি গাছে বছরে গড়ে দুই হাজার পর্যন্ত লেবু ধরে।

    কাওসার আলম বলেন,
    “প্রতি বিঘা বাগান থেকে বছরে অন্তত দুই লাখ টাকা লাভ হয়। ধান বা ভুট্টা চাষে যেখানে খরচ বেশি এবং লাভ কম, সেখানে লেবু চাষ অনেক বেশি লাভজনক ও নিশ্চিত আয় দেয়।”

    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাঈম মোর্শেদ বলেন,
    “দেবীগঞ্জে লেবু চাষ এখন একটি সম্ভাবনাময় খাতে পরিণত হচ্ছে। বানেশ্বর পাড়ার মতো এলাকায় শিক্ষিত যুবকরা যখন কৃষিতে যুক্ত হচ্ছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সঠিক পরিচর্যা, প্রশিক্ষণ এবং রোগবালাই ব্যবস্থাপনা জানা থাকলে লেবু একটি স্থায়ী আয় নিশ্চিত করা ফসল হিসেবে কাজ করতে পারে। কৃষি অধিদপ্তর থেকে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে।”

    তিনি আরও জানান, খুব শিগগিরই মাঠপর্যায়ে বিশেষ ভিজিট ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে অন্যান্য কৃষকরাও সরেজমিনে দেখে শিখতে পারেন কীভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে লেবু চাষ করে স্বল্প খরচে বেশি লাভ করা যায়।

    শিক্ষিত যুবক কাওসার আলমের এই সফলতা প্রমাণ করে—ইচ্ছাশক্তি থাকলে নিজের মাটিতেই গড়ে তোলা যায় সাফল্যের সুন্দরতম পথ।

সম্পর্কিত