আবু জাফর সোহেল রানা,
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রাম জেলায় করোনা মোকাবেলায় জেলা পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম হোম কোয়ারেন্টাইন ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে জন শৃংখলা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম মার্চের প্রথম সপ্তাহেই কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধে পুলিশ সদস্যদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য করনীয় শীর্ষক আলোচনা করে জেলাবাসীকে সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত করেন।
জেলা পুলিশের ১১০০ জন পুলিশ সদস্য সহ গ্রাম পুলিশদের প্রাথমিক প্রশিক্ষন দিয়ে ১১ টি পুলিশ থানা, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা সহ সকল ইউনিট কে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলামের নেতৃত্বে ভিন্ন ভিন্ন টিমে ২/৩ শিফটে কাজ করছে বলে জানা যায়। শতভাগ সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে টহল জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের স্বাস্থ্যসামগ্রী, মাস্ক,পিপিই রেইনকোর্ট, সেনিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে। জনগনকে সচেতন করতে ও ভীড় জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের মোটর সাইকেল টিম, পুলিশ টহল অব্যাহত রয়েছে। এই মুহুর্তে সবথেকে বেশী ঝুকি ও পরিশ্রম করছে পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশের বিশিষ্ট আলেম-ওলামাদের পরামর্শ অনুযায়ী আজকের জুমআসহ সকল জামাআতে সম্মানিত মুসল্লিগণের উপস্থিতি সীমিত রাখার এবং ভাইরাস সংক্রমণ হতে সুরক্ষা নিশ্চিত না হয়ে মসজিদে গমন না করার আহবান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। যা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পুলিশের উপরই বর্তায়। দেশের সংকটময় পরিস্থিতি ও স্পর্শকাতর বিষয়ে জনগনের কথা ভেবে পুলিশকে কাজ করার বড় চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম মার্চের ১ম সপ্তাহে জেলার ১১ টি থানার অফিসার ইনচার্জ সহ পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্ভাব্য অতিথি হিসেবে আসা ভয়ংকর কোভিড-১৯ নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার মানুষদের নিরাপত্তার প্রশ্নে ও সচেতনতা সৃষ্টিতে সর্বপ্রথম পুলিশ সদস্যদের ভাইরাস মোকাবেলায় কাজ করতে নিজেদের প্রস্তুত করেন। ১০ ই মার্চ পুলিশ সুপার কার্যালয় সহ পুলিশ লাইন, পুলিশ ফাঁড়ি ও জেলার ১১ টি থানায় বাধ্যতামুলক সাবান দিয়ে হাত ধৌতকরন কর্মসূচী চালু করেন। পুরো জেলায় হাত ধোয়া নিয়ে যথেষ্ট ইতিবাচক সারা পরে যা স্থানীয় সচেতন মহল ও মিডিয়া গুলো একে সাধুবাদ জানায়।
জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম ও সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ইমিগ্রেশন প্রাপ্ত তথ্যে গত ৩রা মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত অনেক বিদেশ ফেরত প্রবাসী( অসমর্থিত তথ্যে প্রায় ৫০০জন) কুড়িগ্রামে তাদের নিজ নিজ বাড়ীতে ফিরেছেন । জেলা পুলিশ কুড়িগ্রামের সকল থানা ও ইউনিটগুলো করোনা প্রতিরোধে মাঠে নামে। জেলার মোট পুলিশ সদস্য সংখ্যা ১১০০ জন। সকল পুলিশ সদস্যদের ২ / ৩ শিফটে পুলিশের প্রাত্যহিক রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি অগ্রাধিকার দিয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় চলছে নির্ঘুম ও ক্লান্তি হীন কার্যক্রম। কুড়িগ্রামে ফিরেছেন এমন প্রবাসীদের বিষয়ে খোজখবর সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন ও জনশৃংখলা নিশ্চিত করতে জেলার ১১ টি থানায় গ্রাম পুলিশদের ব্রিফ করে কাজে নামার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ সময় পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম প্রতিদিন থানা ও বাজার মনিটরিং করছেন বলে জানা যায়।
১৯শে মার্চ নতুন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম সহ করোনা মোকাবেলায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে জেলা বাসীকে সেবা দানে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ২১ শে মার্চ পুলিশ সুপার কনফারেন্স রুমে বেলা ১১.৩০ মিনিটে স্থানীয় ইলেকট্টনিক্স, প্রিন্ট,অনলাইন মিডিয়া কর্মী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দদের সাথে মিট দা প্রেস এ গনমাধ্যকর্মী ও সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা কামনা করেন। গুজব ও বাজার মনিটরিং এ গনমাধ্যকর্মী দের পরামর্শ ও সহযোগিতা চান।
কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান বলেন, ডেঙ্গু, লবন ও গুজব ছেলে ধরা এমন ইস্যুগুলোর মোকাবেলায় স্যারের নির্দেশনা আমাদের সফলতা এনেছিলো। এবারে করোনা মোকাবেলায় স্যারের দৃঢ় প্রত্যয় ও আমাদের সাথে মাঠে থেকে নির্দেশনা প্রদান প্রতিটি পুলিশ সদস্যের জন্য ইতিবাচক।
পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম জেলার প্রতিটি থানায় করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় পাশে থেকে নিজেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। পুলিশ সদস্যদের মনোবল ধরে রাখতে তিনি নিজে প্রচার প্রচারনা, সচেতন মুলক কার্যক্রম, বাজার মনিটরিং, পুলিশ পেট্রোলিং সহ প্রবাসীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে পরামর্শ প্রদান তদারকি করছেন। জেলা পুলিশের পর্যবেক্ষনে কুড়িগ্রাম জেলায় এ পর্যন্ত ১২৫ জন হোম কোয়ারেন্টাইনের সময় শেষ করেছেন। এখন পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে পর্যবেক্ষনে আছেন ২১৩ জন। পুলিশ তদারকিতে ও নিবিড় পর্যবেক্ষনে হোম কোয়ারেন্টাইনদের দুই বেলা ফোন করে খোজ খবর নেয়া এমনকি তাদের বাড়িতে গিয়েও দেখে আসার বিষয়টি প্রতিবেদক বিভিন্ন সূত্রে তা নিশ্চিত হয়েছেন।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেইন জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে সামাজিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে। কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন ও বাজার নিয়মিত টহলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও টহলের জন্য পিক আপ ভ্যান থানাগুলোতে
সংযুক্ত করার কথা জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম বলেন, জেলার প্রান্তিক মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবাইকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কাজ করে যেতে হবে। ঢাকা থেকে প্রচুর মানুষ গ্রামাঞ্চলে ফিরছে, ফলে আমাদের আগামী বেশকিছু দিন আরো বেশী সজাগ দৃষ্টি ও প্রতিটি মানুষকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করে যেতে হবে। গুজবে কান না দিয়ে আতংকিত না হয়ে আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আপনারা ঘরে ঘরে অবস্থান নিয়ে ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে পুলিশকে সহযোগিতা করার আহবান জানান।
করোনা ঝুকিতে গোটাবিশ্ব সেখানে বাংলাদেশ কতটা ঝুকিতে তার উপলব্ধি করা না গেলেও প্রথম অগ্রগণ্য মাঠ কর্মী হিসেবে পুলিশ সদস্যরা যথেষ্ট ঝুকি নিয়ে কাজ করছেন বলে সচেতন মহলের ধারনা। সে ঝুকিগুলো এড়াতে প্রয়োজনীয় মাস্ক, পিপিই, ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করা হয়েছে । পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রতিটি থানায় নিয়মিত জীবানু নাশক স্প্রে করা হচ্ছে,সাবান দিয়ে হাত ধৌতকরন ব্যবস্থা রেখে মানুষদের উদ্বুদ্ধকরণ করার চেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে । বাজার মনিটরিং, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে পুলিশ মাঠকর্মী দের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সামগ্রী, পিপিই হিসেবে ব্যবহারের জন্য এক ধরনের রেইনকোর্ট সরবরাহ করা হয়েছে। কেরু এন্ড কোং থেকে হ্যান্ড সেনিটাইজার সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হচ্ছে।