সোমবার, ১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি
সোমবার, ১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

হাড়কাঁপানো শীতেও সত্তরোর্ধ্ব এক নারীর অপ্রতিরোধ্য জীবনসংগ্রাম

রুশাইদ আহমেদ, বেরোবি: মাঘের হাড়কাঁপানো শীতের সকাল। উত্তরের এই তীব্র শীতে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) একাডেমিক ভবন-৩ এর সামনের সড়কে মলিন শাড়ির উপর পাতলা চাদর জড়িয়ে চোখে-মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে বসে শিঙাড়া, পেঁয়াজু বিক্রি করছেন এক সত্তরোর্ধ্ব নারী।

নাম তাঁর ফাতেমা বেগম। বয়স পেরিয়েছে ৭০ এর কোঠা। ১১ বছর আগে হারিয়েছেন  স্বামী জয়নাল হোসেনকে। নেই কোনো সন্তানও। দেখাশোনা কিংবা খাওয়ানোর মতো কোনো আত্মীয়স্বজনও নেই। বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি না করে প্রতিবেশীর কাছ থেকে সামান্য টাকা ধার নিয়ে বেরোবির ক্যাম্পাসে শিঙাড়া আর পেঁয়াজু বিক্রি করেন।

বুধবার (১৭ জানুয়ারি) বিকালে বেরোবি ক্যাম্পাসে দেখা হলে ফাতেমা জানান, রংপুর নগরীর মডার্ন শেখপাড়া এলাকার নিজের বাড়ি থেকে বের হয়ে নগরীর লালবাগ মোড় থেকে ১০০ টাকার শিঙাড়া, পেঁয়াজু কিনে হেঁটে হেঁটে আসেন বেরোবি ক্যাম্পাসে। এই শিঙাড়া, পেঁয়াজু বেঁচে যা সামান্য লাভ হয়, তা দিয়ে কোনোভাবে দিন পার করেন।

ফাতেমা বলেন, “বাবা, স্বামী মারা গেছে ১১ বছর। কোনো ব্যাটা-ছাওয়ালও নাই। শরীরে শক্তি নেই তাই মানুষ কাজ দেয় না। মানুষের কাছে হাত পাততে লজ্জা করে। তাই শিঙাড়া, পেঁয়াজু বেচি। গত এক মাস (শীতকালীন ছুটিতে) ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এই আয়ও বন্ধ হয়ে গেছিল। অনেক কষ্টে দিন কাটাইছি। আজ এক মাস পর আইছি। তরিতরকারি আর চালের যে দাম, কী করে খাব?”

বেরোবির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ফাতেমা বেগম এক বছরের অধিক সময় ধরে ক্যাম্পাসে শিঙাড়া, পেঁয়াজু বিক্রি করেন। ক্লাস-পরিক্ষার চাপে সকালে যেসব শিক্ষার্থী না খেয়ে আসেন, তাদের ভরসা ফাতেমা বেগম। তারা তাকে চেনেন। কেউ ভালোবেসে দাদি, আবার কেউ পেঁয়াজু খালা বলে ডাকেন।

এ বিষয়ে বেরোবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রচণ্ড শীতে এই বৃদ্ধা নারীকে ক্যাম্পাসে এভাবে কষ্ট করতে দেখে আমাদের খুব খারাপ লাগে। সন্তান বা নিকটাত্মীয় না থাকায় পেটের দায়ে এমন বয়োবৃদ্ধরা যাঁরা আমাদের চারপাশে এ ধরনের কাজ করে থাকেন, সরকার এবং অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।

সম্পর্কিত