শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

হবিগঞ্জে পুরাতন খোয়াই নদী পরিদর্শন শেষে বাপা ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই নদীর পুরো অংশের দখল উচ্ছেদ, খনন ও সংরক্ষণ করা জরুরি
নদীটিকে নাগরিক সুবিধায় সম্পৃক্ত করার দাবি
স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করলে শহরের যানজট কমবে
এই শহরের প্রধান জলাধার হচ্ছে পুরাতন খোয়াই নদী। বৃষ্টির পানির প্রধান আধার নদীটির অধিকাংশ ভরাট- দখল হয়ে যাওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের জলাবদ্ধতা এবং কৃত্রিম বন্যা দেখা দেয়। যা কয়েক বছর ধরে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বাসাবাড়ি, বিভিন্ন পাড়া- মহল্লা এমনকি প্রধান সড়কও ডুবে যায়। মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয় চরমভাবে। পরিবেশ- প্রতিবেশ রক্ষা ও জলাবদ্ধতামুক্ত স্বাস্থ্যকর নগরী গড়ে তুলতে পুরাতন খোয়াই নদীর পুরো অংশের দখল উচ্ছেদ করে খনন ও সংরক্ষণ করা জরুরি।

হবিগঞ্জ পৌরসভা কর্তৃক পুরাতন খোয়াই নদীর নিউ মুসলিম কোয়াটার এলাকা পরিষ্কার পরিছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে আজ শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ( বাপা) হবিগঞ্জ শাখা ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার এর পক্ষ থেকে একথা বলা হয়।

বাপা হবিগঞ্জ শাখার সভাপতি অধ্যাপক মো: ইকরামুল ওয়াদুদ এর নেতৃত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী মমিন, সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল, নির্বাহী সদস্য এডভোকেট বিজন বিহারী দাস, প্রকৌশলী আব্দুল মুনিম চৌধুরী বুলবুল, এস এ শওকত চৌধুরী, পুরাতন খোয়াই নদী পুরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট হাসবি সাঈদ চৌধুরী প্রমুখ।

খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাপা সেক্রেটারি তোফাজ্জল সোহেল বলেন, সরকারি -বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে নদীতে। বিভিন্ন গুষ্টি এবং নদী তীরের অনেক বাসিন্দাও নদীটি দখলে নিয়েছেন। দখলের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। প্রায় ২ দশক ধরে পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজ পুরাতন খোয়াই নদী দখলমুক্ত করে সংরক্ষণের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ২০১৯ সালে নদী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন। মাছুলিয়া থেকে শায়েস্তানগর পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গা থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয় সেসময়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ বদলি হলে উচ্ছেদ কার্যক্রম থেমে যায়! এবং পরবর্তীতে উচ্ছেদকৃত অংশ পুনরায় দখলে চলে যায়।
তিনি বলেন, নদীটি সংরক্ষণের মাধ্যমে শহরকে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর নগর হিসেবে গড়ে তোলার দাবি রাখে। কিন্তু হবিগঞ্জে তার উল্টো চিত্র দেখা যায়। যথাযথ পরিকল্পনা ও বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তার মাধ্যমে নদীটিকে নাগরিক সুবিধায় সম্পৃক্ত করার দাবি জানান তিনি।

তিনি যুক্ত করেন, একসময় এই নদীতে পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌকা চলাচল করত। শহরের মধ্যে ছিল একাধিক নৌকা ঘাট। নদীটির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত করলে শহরের যানজট কমবে, সৃষ্টি হবে অর্থনৈতিক গতিশীলতা, বৃদ্ধিপাবে নান্দনিক সৌন্দর্য। তাই তিনি নদীটির প্রতি যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানান। আর তা না হলে দিন দিন ভোগান্তি বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

বাপা সভাপতি অধ্যাপক মো: ইকরামুল ওয়াদুদ নদীটি পরিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করায় হবিগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, খোয়াই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এই নগর ও সভ্যতা। মানুষের প্রয়োজনেই ১৯৭৬-৭৭ ও ৭৮-৭৯ সনে দুই দফায় ৫ কিলোমিটার লুপকাটিং এর মাধ্যমে সেসময় নদীটিকে শহরের বাইরে দিয়ে প্রবাহিত করা হয়। শহরের ভিতরের থেকে যাওয়া অংশটুকু পুরাতন খোয়াই নদী হিসেবে পরিচিত লাভ করে। অরক্ষিত থাকলে যা হবার তাই হয়েছে। নদীর বিভিন্ন অংশ নানাভাবে ভরাট -দখল হয়েছে। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা, কৃত্রিম বন্যা আর শুষ্ক মৌসুমে মশা, মাছির আকর, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায় যে কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। এইসব সমস্যা সমাধানে পুরাতন খোয়াই নদী রক্ষার বিকল্প নেই। নদীর সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে স্থায়ী সীমানা পিলার স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

সম্পর্কিত