জাকির হোসেন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
প্রত্যেকটা মানুষ স্বপ্ন দেখে বড় হবার, তেমনি ছোট থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখতেন ভুরুঙ্গামারীর মোহাদ্দেস। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তির মেধা তালিকায় ৮৮৫তম স্থান করে নিয়েছেন সে। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে অর্থাভাবে। ঢাবিতে ভর্তি এবং পরের কয়েক বছর পড়ার খরচ জোগানোই এখন তার একমাত্র চিন্তা।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কামাত আঙ্গারীয়া গ্রামে বসবাস করেন মোহাদ্দেস আলী। অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠা মোহাদ্দেস ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় তিলাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৪.৯১ এবং চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
পিতা ওয়াহেদ আলী নিজের জমিজমা নেই বলে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করেন, প্রতিদিন কাজ না থাকায় তাদের সংসারে অভাব লেগেই থাকে। সংসারের ব্যয় ভার মিটিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে মোহাদ্দেসের পড়ালেখার খরচ বহন করার সামর্থ্য নেই তার বাবার। প্রাথমিক অবস্থায় ভর্তির জন্য যে টাকা লাগবে সেটাই এখনো জোগাড় করতে পারেননি তিনি। ওয়াহেদ আলী কান্না ঝড়া চোখে বলেন, ‘যহন হুনলাম পোলাডা ঢাকায় চান্স পাইছে তহন খুশিতে আত্মাহারা হইয়া গেছিলাম, কিন্তু যহন চিন্তা করলাম ওরে ভর্তি করামু কিবা কইরা? আমার বসত ভীটা ছাড়া ত আর কিছুই নাই, তহন কলিজাডা ফাইটা যাইতেছিলো”
তার কাছ থেকে আরো জানতে পারি তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। অভাবের কারনে বড় ছেলে ও মেয়েকে তেমন পড়াশোনা করাতে পারেনি। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন আর বড় ছেলে একটি চামড়া কারখানায় অল্প বেতনে কাজ করে। মোহাদ্দেসের মেজো বোন চলতি বছর এইচএসসি পাশ করে একটি সরকারি কলেজে অনার্সে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু টাকার অভাবে তারও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। ওর মেজো ভাই আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। সব ছোট মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে।
দারিদ্রের সাথে লড়াই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া মোহাদ্দেস জানায়, “ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি কিন্তু বাবার পক্ষে ভর্তির এতোগুলো টাকা জোগাড় করা অসম্ভব। বাবা, ভাই, বোন ও শিক্ষকরা মিলে যে অর্থ দিয়েছিল, ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ ও ঢাকা যাতায়াত করতে তা ফুরিয়ে গেছে। ‘Motivate bhurungamari’ সংগঠন ঢাকাতে অল্প কিছু টাকায় কোচিংয়ে ভর্তি করে দিয়েছিল বর্ণের সহায়তায়, Dream DU Hostel ৫ মাস থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। স্কুল ও কলেজের শিক্ষকগণ টাকা ছাড়াই প্রাইভেট পড়াতেন। চান্স পেয়ে খুশি হয়েছিলাম কিন্তু ভর্তির খরচ আর পরবর্তী সময়ে পড়ালেখার খরচ কীভাবে চলবে এ চিন্তায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার স্বপ্ন মনে হয় আর পূরণ হবে না।’’