জুন ৭, ২০২৩ ১:২৩ সকাল



সরকারী নিয়মনীতি না মেনেই সিরাজগঞ্জে গড়ে উঠেছে অনুমোদনবিহীন একাধিক হাসপাতাল

 

নাসিফ খান, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জে চিকিৎসা সেবার নামে অনুমোদনহীন হাসপাতাল করে অর্থ বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে শামীম রেজা নামে এক হাসপাতালের মালিকের বিরুদ্ধে। শামীম রেজা দীর্ঘদিন যাবত সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় নামে বেনামে ৬টি অনুমোদনহীন হাসপাতাল তৈরী করে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে আসছে। শামীম রেজা বহুলী ইউনিয়নের কদমপাল গ্রামের মৃত মিজানুর রহমান এর ছেলে ও অনুমোদন বিহীন হাসপালের মালিক। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার হোসেনপুর মহল্লায় বাস করেন। সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন সুত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে জনতা ডায়াগনষ্টিক এন্ড ক্লিনিক, বেলকুচি উপজেলার মুকুন্দগাতী বাজারে ইউনাউটেড জেনারেল হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ রোড আল মদিনা জেনারেল হাসপাতাল, চান্দাইকোনা জেনারেল হাসপাতাল, কামারখন্দে সততা জেনারেল হাসপাতালের কোন রকম নবায়ন বা অনুমোদন নাই।

গত ৩০ জুন ২০১৯ইং তারিখে হালনাগাদ রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ শহরে আল হেরা নামে একটি হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে। এটারও কোন আবেদন নেই। ব্যাঙের ছাতার মত হাসপাতাল গড়ে উঠলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ হাসপাতালগুলোর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই অদক্ষ অপারেটর দিয়ে এক্স-রে মেশিন, ইসিজি, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ইত্যাদি চালানো হচ্ছে। আর এসব অনুমোদনবিহীন হাসপাতালগুলোতে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মূত্যুর ঘটনা ঘটছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মান নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে অভিযোগ উঠছে হরহামেশায়। এই হাসপাতালে চিকিৎসার নামে চলছে অবৈধ্য ব্যবসা। আর এতে প্রতিনিয়তই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা সহজ-সরল রোগী ও তার পরিবার প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালে মালিক শামীম রেজাসহ ভুয়া ডাক্তার ও দালালদের চক্রের খপ্পড়ে পড়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। এখানে শুধু অর্থই নয়, চলে রোগীদের জীবন নিয়ে খেলাও। এইসব হাসপাতালগুলো সরকারী অনুমোদন পাওয়ার আগেই তাদের কার্য্যক্রম চালাচ্ছে। অনলাইনে আবেদন করা হলেও এখনো তারা লাইসেন্স পাননি।

সরকারী বিধি অনুযায়ী লাইসেন্স পাওয়ার একদিন আগেই স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার অধিকার তাদের নেই। একারণে অনেক হাসপাতালে চিকিৎসকের কাজ করেন নার্সরা। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্যাথলজিস্ট ছাড়াই চলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ। সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারির অভাবে দুষছেন ভুক্তভোগীরা। সরজমিনে শামীম রেজার সব হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তারা স্বাস্থ্যবিভাগে লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করেই শুরু করেছে তাদের কার্য্যক্রম। নেই কোনো অভিজ্ঞ প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, ট্রেনিংপ্রাপ্ত ডিপ্লোমা টেকনোলজিস্ট। আল মদিনা হাসপাতালে পরিচ্ছন্নকর্মী নিজেই এক্স-রে করছে।

তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন সে বাইরে আছে। বর্তমানে আমি এক্স-রে করছি। তবে টেকনোলজিস্টের নাম জানতে চাইলে দেখা যায় একই ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন রকমের। এ বিষয়ে ডাক্তার নেতারা বলছেন, ডাক্তারদেরও অনুমোদনবিহীন ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে যাওয়া ঠিক নয়। অবৈধ কিংবা মানহীন ক্লিনিকগুলোকে ‍শুধুমাত্র জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়। আমার মতে এগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত। চিকিৎসকদের সঙ্গে আমরা একাধিকবার বৈঠক করেছি। তাদের বলে দেয়া হয়েছে যাতে তারা অননুমোদিত কোনো ক্লিনিকে না যান। সেখানে গেলে তার দায়-দায়িত্ব তাদের।

এ ব্যাপারে অনুমোদনহীন হাসপাতালের মালিক শামীম রেজার সাথে কথা হলে তিনি বলেন- আমার হাসপাতালের কোন অনুমতি নাই। আপনারা যা ইচ্ছে তাই লেখেন বলে সে ফোন রেখে দেয়।

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: মো: জাহিদুল ইসলাম বলেছেন- অনেকে আবেদন করেই ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও এক্স-রে মেশিন চালায়। আমরা অনুমোদনহীন হসপাতালগুলোকে চিঠি ইসূ করেছি।রেজিষ্ট্রেশন পাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠান চালানো বিধি সম্মত নয়। এদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।



Comments are closed.

      আরও নিউজ