প্রতীকী ছবি
স্বাস্থ্য ডেস্ক: ভারতীয় উপমহাদেশে শাড়ি এবং ধুতি নারী-পুরুষদের এক ঐতিহ্যবাহী পোশাক। ভারত এবং বাংলাদেশে বহু নারী-পুরুষ জীবনের পুরোটাই প্রায় শাড়ি ও ধুতি পরিধান করেই কাটিয়ে দেন।
তবে নারীরা শাড়ির সঙ্গে পরে থাকেন পেটিকোট (অভ্যন্তরীণ স্কার্টের মতো)। যা ফিতার দৃঢ় বাঁধনের মাধ্যমে আটকে রাখা হয় কোমরে। আবার পুরুষেরা যে ধুতি পরেন তা-ও শক্ত করেই বাঁধা হয় কটিদেশে।
কিন্তু এবার এই পোশাক দুটির কারণেই মানবদেহে ‘স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা’ নামের ক্যান্সার সৃষ্টি হয়ে থাকে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। যাকে ‘শাড়ি ক্যান্সার’ বা ‘ধুতি ক্যান্সার’ বলেও অভিহিত করা হয়।
ভারতের নয়াদিল্লির পিএসআরআই হাসপাতালের ক্যান্সারবিষয়ক সার্জন ডা. বিবেক গুপ্তা গবেষণাটির বিষয়ে বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে পেটিকোট কিংবা ধুতির মতো পোশাক যাতে দড়ি বাঁধা থাকে, যা পরে থাকলে ওই দড়ি বা ফিতা বাঁধা অংশে কালশিটে দাগ পড়ে যায় কারও কারও। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা হতে থাকলে সেখানে ক্ষত পর্যন্ত হতে পারে আর সেখান থেকেই এই সূত্রপাত হতে পারে প্রাণঘাতী ক্যান্সারের।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় নারীদের মধ্যে পাওয়া মোট ক্যান্সারের মধ্যে ১ শতাংশ ক্ষেত্রেই শাড়ির ক্যান্সার পাওয়া গেছে। মুম্বাইয়ের আরএন কুপার হাসপাতালেও এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। শাড়ি এবং ধুতি দুটি পোশাকই ছিল এই গবেষণায়। এই শাড়ি ক্যান্সারের নামটি মুম্বই হাসপাতালের ডাক্তাররা দিয়েছিলেন যখন এ রকম কেইস প্রথম সেখানে দেখা যায়। সে সময় এই ধরণের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ৬৮ বছর বয়সী এক নারী, যিনি ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শুধু শাড়ি পরিধান করেছিলেন।
শাড়ি বা স্কোয়ামাস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণসমূহ:
১. শরীরের কোনো অংশে দীর্ঘ সময় ধরে রক্ত চলাচল বন্ধ হলে ত্বকের রং পাল্টে যায়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হতে পারে। পাশাপাশি, বাঁধন আলগা হওয়ার পর ওই নির্দিষ্ট জায়গা অসম্ভব চুলকাতে পারে।
২. দীর্ঘদিন ত্বকের নির্দিষ্ট জায়গায় বাঁধন দিতে দিতে সেই জায়গায় ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। অন্তর্বাসের গার্ডার ত্বকের উপর চেপে বসে থাকলেও একই রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩. প্রথমে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ক্ষত হওয়া, সেখান থেকে সংক্রমণ হলে তা ক্যান্সারে পরিণত হতে সময় লাগে না। অনেকের ক্ষেত্রে কোমরের আশপাশে টিউমারও হতে পারে।
এই ধরনের সমস্যা নিরাময়ের উপায়:
১. পেটিকোট বা ধুতি পরলেও তার বাঁধন আলগা করে রাখতে হবে।
২. শরীরের নিম্নাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। দেহের সেই সব অংশে যাতে ঘাম না জমে, সেই দিকেও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
৩. সম্ভব হলে নারীর পেটিকোটের নিচে শেইপওয়্যার পরতে পারেন। যাতে বাঁধনের দাগ ত্বকের উপর না পড়ে।
৪. নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাস কেনার সময়ে কোমরের স্ট্র্যাপ দেখে কেনা উচিত। তবে তা যেন খুব সরু না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
৫. বাড়ির বাইরে থাকা অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ দৃঢ়ভাবে পেটিকোটের দড়ি কিংবা ধুতির গিঁট বেঁধে রাখার পর বাড়ি ফিরে ওই অংশ ভালো করে পরীক্ষা করতে হবে। ত্বকের রঙে কোনো পরিবর্তন ঘটলে ঝুঁকি এড়াতে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।