মঙ্গলবার, ১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
মঙ্গলবার, ১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস: এক সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত

১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনেই মুক্তিযুদ্ধে আশু পরাজয়ের সম্ভাবনা আঁচ করতে পেরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশকে মেধাশূন্য করার এক ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের সহায়তায়। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা এদেশের প্রথম শ্রেণির বুদ্ধিজীবী তথা কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী প্রমুখদের বাসা হতে চোখ বেঁধে অপহরণ করে নির্যাতনের পর হত্যা করে। তাঁদের অধিকাংশের মরদেহ বিজয় অর্জনের পর নিকটাত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমি হতে শনাক্ত করেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ হতে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যেসকল বাঙালি দার্শনিক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ক্রীড়াবিদ, সঙ্গীতশিল্পী, নাট্যশিল্পী প্রমুখ পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহত হন—তাঁরাই শহিদ বুদ্ধিজীবী। কয়েকজন স্বনামধন্য শহিদ বু্দ্ধিজীবী হলেন— অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সার, সাংবাদিক সেলিনা পারভীন, ডা: ফজলে রাব্বি, গীতিকার ও সুরকার আলতাফ মাহমুদ, চলচ্চিত্রকার ও কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান, প্রমুখ।

অত্যন্ত নির্মমভাবে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যই ছিল এদেশের প্রগতিশীল ও গণতন্ত্রমনা ব্যক্তিদের হত্যা করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত দিক হতে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দুর্বল করে তার অগ্রযাত্রাকে দারুণভাবে ব্যাহত করা। এ উদ্দেশ্য নিয়েই তারা এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বাসা হতে তুলে নিয়ে হত্যা করে সৃষ্টি করে দেশব্যাপী অসংখ্য বধ্যভূমির।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা নিয়ে ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিউজ উইক-এ নিকোলাস টমালিন এক নিবন্ধে লিখেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৭০ জন। যে সংখ্যা ১৯৯৪ সালে বাংলা একাডেমি হতে প্রকাশিত ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ’ অনুসারে ২৩২, যদিও সেখানে তালিকাটির অসম্পূর্ণতার কথা নির্দ্বিধায় উল্লেখ করা হয়।

১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর(মতান্তরে ২৯ ডিসেম্বর) জহির রায়হানকে প্রধান করে প্রথমবারের মতো বেসরকারিভাবে একটি বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এদেশের প্রায় ২০ হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে উল্লেখ করা হয়। এ প্রসঙ্গে কমিটির প্রধান জহির রায়হান বলেন, “এরা নির্ভুলভাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনস্ক বুদ্ধিজীবীদের বাছাই করে আঘাত হেনেছে।“ কিন্তু ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হানও নিখোঁজ হলে কমিটিটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথমবারের মতো মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটে ১৯৯৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। এদিন আলবদর বাহিনীর চৌধুরী মাইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামানকে আসামি করে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিনের বোন ফরিদা বানু। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে এদেশের সূর্য সন্তানদের হারানোর বেদনা কিছুটা উপশমিত করে বাঙালি জাতি।

 

রুশাইদ আহমেদ
(শিক্ষার্থী,
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।)

সম্পর্কিত