এম এ কাহার বকুল, লালমনিরহাট:আজ বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর), বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। বিশ্বের ১২১টি দেশে একযোগে এই দিনে ফিজিওথেরাপি দিবস পালন করা হয়। বিশ্বব্যাপী সচেতনতা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সাল থেকে বৈশ্বিক ফিজিওথেরাপি সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ফিজিওথেরাপি’র আহ্বানে ৮ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়। ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) নেতৃত্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও এর সহযোগিতায়, লালমনিরহাট জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস আয়োজন করে।
বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান, উপ-পরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় লালমনিরহাট। সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরমান আলী, প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র লালমনিরহাট।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মোঃ রায়হানুল ইসলাম, শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা, লালমনিরহাট, লাইলা আক্তার, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, সদর, লালমনিরহাট। ডা. মোঃ আশরাফুল আলম, কনসালটেন্ট, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, ডা. মোঃ বারিউল ইসলাম, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র লালমনিরহাট, মোঃ আমিনুল ইসলাম মৃধা, ওয়াস ভেল্যু চেইন স্পেশালিষ্ট, ম্যাক্স ফাউন্ডেশন, মোঃ মাসুদ রানা, প্রজেক্ট ম্যানেজার, ইএসডিও হেলদি ভিলেজ ইন আরবান প্রোগ্রাম লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এবারের ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষে প্রতিপাদ্য বিষয় “কোমর ব্যাথায় ফিজিওথেরাপি একটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি”
আলোচনাসভায় স্বাগত বক্তব্য ও প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন মোঃ মাসুদ রানা, প্রজেক্ট ম্যানেজার, ইএসডিও হেলদি ভিলেজ ইন আরবান প্রোগ্রাম।
সমাজসেবা ও প্রতিবন্ধী সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন লাইলা আক্তার ও মোঃ রায়হানুল ইসলাম, সমাজসেবা কর্মকর্তা।
ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষে বক্তব্য রাখেন ডাঃ মোঃ বারিউল ইসলাম এবং ডাঃ মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, ফিজিওথেরাপিস্টদের সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ফিজিওথেরাপি আধুনিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ও স্বতন্ত্র চিকিৎসা ব্যবস্থা। যেখানে বিভিন্ন ধরনের বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস, প্রতিবন্ধী এবং প্রতিবন্ধকতার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তির সমস্যার সমাধান ও প্রতিবন্ধকতা প্রতিরোধ করে স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করেন ফিজিওথেরাপিস্ট।
বিশ্বব্যাংকের এক জরিপ মতে বাংলাদেশের ১০ ভাগ জনগোষ্ঠী প্রতিবন্ধীতায় আক্রান্ত ও তাদের ৮০ ভাগই গ্রামে ও মফস্বল শহরে বাস করেন।
আইন অনুযায়ী, স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে ৫ বছর মেয়াদী স্নাতক ডিগ্রীধারীগণ ফিজিওথেরাপিস্ট। বাংলাদেশে এ মানদণ্ডে প্রতি ৫০ হাজারে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছে।
প্রতিবন্ধী শিশুদের অভিভাবক মোছাঃ রোমানা বেগম বলেন, আমার ছেলে প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিয়েছে, আমি মনে করি এর প্রধান কারণ হলো, বাবা মা আমাকে কম বয়সে বিয়ে দিয়েছে, আমি অল্প বয়সে মা হয়েছি এবং সঠিকভাবে গর্ভকালীন ও প্রসবপরবর্তী এএনসি ও পিএনসি সেবা গুলো নিতে পারি নাই। এখন আমি ইএসডিও হেলদি ভিলেজ ইন আরবান প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে লালমনিরহাট জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে ফ্রি সেবা নিতে এসে আমার ছেলেটি এখন অনেক সুস্থ এবং আগের চেয়ে ভালো আছে। তাই এখন আমি নিয়মিত এই সেবাগুলো নিতে আসি। আমি চাই সকল প্রতিবন্ধী শিশুদের বাবা মা যদি তাদের সন্তানদের এই সেবা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন তাহলে হয়তো প্রতিবন্ধী শিশুগুলো উপকৃত হবে এবং সুস্থ হবে। এছাড়াও আমি সবাইকে বলবো আমার মতো কেউ যেন অল্প বয়সে বিয়ে না করে অল্প বয়সে মা না হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ফরমান আলী বলেন, ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের তথ্যমতে বাংলাদেশে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব ৭ দশমিক ৩ শতাংশ অস্টিওআথ্রাইটিস রোগী রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগ নারী স্থূলতায় আক্রান্ত বা শারীরিক কার্যক্রমে কম সক্রিয়। অস্টিওআর্থাইটিস হলে হাড়জোড়ে ও মাংসপেশিতে ব্যথা হয়, চলাফেরায় কষ্ট হয় এমনকি প্রতিবন্ধীও হতে পারে। বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস উপলক্ষে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং মনে রাখতে হবে যে, ফিজিওথেরাপি একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ব্যবস্থা, নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিলে অনেক প্রতিবন্ধী শিশু সুস্থ হবে, তাই আপনারা আসেন আমাদের প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা নিন, সুস্থ থাকুন।
তিনি ইএসডিও এবং ম্যাক্স ফাউন্ডেশন কে ধন্যবাদ জানান এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য।
সবশেষে ইএসডিও হেলদি ভিলেজ ইন আরবান প্রোগ্রাম এর সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী শিশুদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সেবা নিতে আসার যাতায়াত ভাতা প্রদান করা হয় এবং আলোচনা সভা সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।