রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি: বাস্তবতা ও করণীয়” বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ( ২৫ মে) শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ড. রকন জাহানের সঞ্চালনায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, একটি সমাজ যখন গড়ে ওঠে তখন ভালো মন্দ সবকিছু নিয়ে বিচার করা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও সমাজের বাইরে নয়। বর্তমান সমাজে যৌন হয়রানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসুক।যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে অপরাধ যে করেছে তাকে চিহ্নিত করতে হবে এবং শাস্তির ব্যবস্তা করতে হবে।
রাবিতে যৌন হয়রানি ও নিপীড়নমূলক নীতি প্রণয়নের পর ২-১ জনার শাস্তি হয়েছে। আমি ৫০ এর অধিক যৌন হয়রানি ভুক্তভোগীর কাছে গেছি তারা সত্য কথা বলে না। আমি চায় এর কারণ খুজে বের করা হোক। যৌন হয়রানি প্রতিনিয়ত ঘটছে কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, যার যার জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধী শাস্তির আওতায় আসুক, কারণ শাস্তি না হলে অপরাধী পার পেয়ে যায় এবং অন্যরাও সুযোগ পায়। অপরাধ যিনি করেছেন তাকে সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করতে হবে। সেই সাথে আমাদেরকে পারিবারিক সুশিক্ষা, সামাজিক আন্দোলন, এগুলো বেশি করে করতে হবে, তাহলে যৌন হয়রানি কমে যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ছেলেরাও এখন সেক্সুয়াল হ্যারেজমেন্ট হচ্ছে, বিশেষ করে মাদ্রাসায় ছোট ছোট বাচ্চাদের বাবা মা বিশ্বাস করে রেখে আসে, সেখানে প্রায়ই এমনটা হয়। আমি দীর্ঘদিন এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার ফলে অনেক অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যান রয়েছে, যেমন ২০২২ সালে ৭১৫ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তাহলে আমরা কি সভ্য হতে পেরেছি? পারিনি। আমরা বলি শিক্ষক আমার বাবা, না তোমার বাবা একটাই, শিক্ষক বাবা নয়, অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছেও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। এটা মাথায় রাখতে হবে। এজন্য এই কণ্টকাকীর্ণ পথে সাবধানে পথ চলতে হবে। একজন অনেক ভালো পড়ান, তার মানে এই নয় যে, সে অনেক ভালো মানুষ। এগুলো আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে।
যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ বিষয়ক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. তানজিমা জোহরা হাবিব বলেন, আজকের সম্পূর্ণ আয়োজনটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য। শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির শিকার হলে যাতে অভিযোগ করতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট স্থানে অভিযোগ বক্স রাখা হয়েছে, প্রতিদিন সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এখানে নিজেদের পরিচয় গোপন করে তারা অভিযোগ করতে পারবেন। আমরা চেষ্টা করছি সবার অভিযোগ গুলো খতিয়ে দেখতে। যদি প্রমাণ পাওয়া যায় অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
এ ছাড়া যদি অভিযোগ মিথ্যা হয় তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা প্রত্যেকে বিভাগের সভাপতির কাছে পত্র দিয়েছি তারা যাতে নতুন শিক্ষার্থীদের এসব সম্পর্কে প্রথম থেকেই ধারণা দেওয়া হয়। আমি সবসময় খেয়াল করেছি এর প্রতিকার কখনো চাওয়া হয়না, আবার চাইলেও পাওয়া যায় না।
আমরা যদি প্রতিটা হলে এরকম সেমিনার করতে পারি তাহলে আশা করি আবাসিক শিক্ষার্থীরা আরো সচেতন হতে পারবে। বিলবোর্ড বা পোস্টার আরেকটা ভালো মাধ্যম হতে পারে। এর মাধ্যমিক যৌন হয়রানির ধরণ ও শাস্তি সম্পর্কে ধারণা পৌছে দিতে পারি। এছাড়া একটি ওয়েবসাইট ডেভেলপ করার চেষ্টা করছি যাতে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে অভিযোগ করতে পারে। এটা এখনো করা সম্ভব হয়নি তবে খুব শীঘ্রই এটা বাস্তবায়ন হবে আশা করছি। এসব আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।
সেমিনারের দ্বিতীয় পর্বে আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলিম কি কি কাজ যৌন হয়রানির মধ্যে পরবে তা সবার সামনে তুলে ধরেন। এসময় তিনি বলেন যারা অপরাধ করে আমরা শুধু তাদের কথা বলি কিন্তু যারা অপরাধী কে নানাভাবে সাহায্য করে তাদের আমরা কিছু বলি না। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ পরিবেশ চায়।
রাজশাহী কোর্টের জজ জিয়াউর রহমান
যৌন হয়রানির শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা করেন। মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা বানু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
এ সময় অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, সভাপতি তানজিমা জোহরা হাবিব, জবি উপাচার্য সাদেকা হালিম-সহ প্রত্যেক বিভাগের দুই জন করে শিক্ষক ও অসংখ্য শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।