সহিজল ইসলাম, রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলায় কোন জলমহাল নেই কিন্তু প্রতিদিন অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এতে নদীর তলদেশের ভূপ্রকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে ঝুঁকিতে পড়ছে আবাদী জমি ও নদী তীরবর্তী জনপদ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ,গত কয়েক বছর ধরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করলেও স্থানীয় প্রশাসন প্রভাবশালী এসব বালু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,রাজীবপুর উপজেলার নৌঘাট সংলগ্ন এলাকায় ৩ থেকে ৪টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দীন রাত বালু উত্তোলন করে আসছে ইসাহাক ও আমিনুল নামের নামের দুই ব্যাক্তি।এতে করে নদীর তলদেশ ভেঙ্গে পলি পরে নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে ভেঙ্গে যাচ্ছে আশেপাশের জমি।
উপজেলার পাখিউড়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে রৌমারী উপজেলার সীমান্ত সংলগ্ন সোনাভরি নদীতে বিক্ষিপ্ত ভাবে ১৫ থেকে ২০টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে কোদালকাটি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য তোতা মিয়া,ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম এবং আনিছুর, আমিনুল, রফিকুল, নজরুল, পাপু, ইসমাইল সহ আরো অনেকে।
এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পানি সামান্য বৃদ্ধি হলেই দেখা দেয় নদী ভাঙ্গন বলে জানান পাখিউড়া এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আছমত আলী।তিনি আরও বলেন ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিবছর বিলিন হচ্ছে আবাদি জমি ও ঘরবাড়ি।এসব অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন আন্তরিক নয় বলেও জানান তিনি।
২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান, চা বাগানের ছড়া বা নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এছাড়াও সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ।
তবে বালু ব্যাবসায়ীরা এসব কোন নিয়ম মানে না।নিজের সুবিধা মত বালু উত্তোলন করে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পকেটে পুরছেন।
অবৈধ ভাবে নদী থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বালু ব্যাবসায়ী তোতা মিয়া বলেন,আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও ভূমি অফিস কে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করি। ‘এসব পত্রিকায় লিখে কোন লাভ হবে না’।কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন,অনেকেই বালু তোলে তাই আমিও ড্রেজার মেশিন বসাইছি।সবাই বন্ধ করলে আমিও বন্ধ করব।
রাজীবপুর উপজেলার নৌঘাট থেকে বালু উত্তোলনের ফলে কি কি সমস্যা হচ্ছে জানতে চাইলে স্থানীয় শাহজামাল জানান,ড্রেজার দিয়া বালু তুললে জমিতে গভির খাদ হয় চারপাশের জমি ভেঙ্গে সেই খাদে পরে এতে অনেক জমি নষ্ট হয়।এছাড়াও বর্ষাকালে নদী ভাঙ্গন বেড়ে যায়।
এলাকাবাসী সূত্র আরও জানা গেছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী দের বিরুদ্ধে কখনও কখনও ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযান চালানো হয়। এসময় কিছুদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে সুযোগ বুঝে কয়েকদিন পর আবারও বালু উত্তোলন শুরু করে বালু ব্যাসায়ীরা।
রৌমারী রাজীবপুর সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আল ইমরান বলেন,স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে ড্রেজার মেশিনের পাইপ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে।এবং কঠোরভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)মোঃ মেহেদী হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সম্প্রতি কয়েকজন ড্রেজার মালিককে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল জরিমানার সাজা দেওয়া হয়েছে।এখনও যদি কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তাদের বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।