শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

মা কথা না-ও হতে পারে, ঈদের শপিং করে নিও : জলদস্যুদের কবলে পড়া জয়

নিউজ ডেস্ক : ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। কেএসআরএম কোম্পানির এই জাহাজে জয় মাহমুদসহ ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রয়েছেন।

‘মা আমার মোবাইল ফোনে এমবি থাকবে না। কথা না-ও হতে পারে। আমার সঙ্গে হয়তো এক-দুই মাস কথা না-ও হতে পারে। ঈদে শপিংসহ যা কেনা লাগে তোমরা কিনে নিও।’ এসব কথা মা আরিফা বেগমকে বলেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া জয় মাহমুদ নামের এক নাবিক।

জয় মাহমুদ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের সাধারণ নাবিক হিসেবে কর্মরত। তিনি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের সালাইনগর গ্রামের মো. জিয়াউর রহমানের ছেলে। জয় মাহমুদের জন্ম ২০০০ সালের ২৮ ডিসেম্বর। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি বড়। ২০২১ সালে জাহাজে চাকরি নেন তিনি। এরপর প্রশিক্ষণ শেষে সর্বশেষ চার মাস ছুটি কাটিয়ে জাহাজে যান তিনি। জিম্মি হওয়ার পর দুশ্চিন্তা এড়াতে মা-বাবাকে জিম্মি হওয়ার বিষয়টি জানাননি জয় মাহমুদ।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহসহ ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে জিম্মি হওয়ার খবর প্রচারের পর জয় মাহমুদদের বাড়িতে মাতম শুরু হয়। জয় তাঁর মাসহ বাড়ির সবার সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ রাখতেন। গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টার সময়ও জয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে পরিবারের।

জয় মাহমুদের চাচাতো ভাই মারুফ হোসেন বলেন, ‘গতকাল বিকেল ৪টার দিকে জয় তাঁর মা-বাবা ও ছেলের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলি। জয় আমাকে জলদস্যুদের কবলে পড়ার কথা জানালেও তাঁর মা-বাবাকে বলেনি। সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিটের দিকে জয় হোয়াটস অ্যাপে লিখে জানায়—এরপর আর তারা কথা বলতে পারবে না। তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এরপর আর কথা বলা যায়নি। বিষয়টি আমি পরিবারকে জানানোর পর তার মা মোছা. আরিফা বেগম ছেলের জন্য কেঁদে চলেছেন। আমরা জয়ের কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।’

জয় মাহমুদের মা মোছা. আরিফা বেগম বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে কথা বলার সময় জয় জানায়, তাঁরা আফ্রিকার মধ্যে রয়েছে। আমাকে বলে সে ভালো আছে। আমার ছেলে ২০২১ সালে জাহাজে চাকরিতে যোগ দিয়ে ট্রেনিং নিয়ে ছুটিতে বাড়িতে আসে। এরপর সে জাহাজে যায়। জাহাজে যাওয়ার প্রায় ৪ মাস হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তাঁর সঙ্গে কথা হয় আমাদের।’

সর্বশেষ কথার সময় জয় তাঁর মা আরিফা বেগমকে বলেন, ‘মা আমার ফোনে এমবি থাকবে না, কথা না-ও হতে পারে। আমার সঙ্গে হয়তো এক-দুই মাস কথা না-ও হতে পারে। ঈদে শপিংসহ যা কেনা লাগে তোমরা কিনে নিও।’

জয় মাহমুদের বাবা জিয়াউর রহমান তাঁর ছেলেসহ জাহাজের সবাইকে জলদস্যুদের থেকে মুক্তি চেয়েছেন। তিনি সরকারের কাছে জিম্মিদের সুস্থ ও জীবিত উদ্ধারের আবেদন জানান।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি) সদস্য মজিবর রহমান বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের মাধ্যমে জয় মাহমুদসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ২৩ জনকে জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পেরেছেন। এরপর থেকে এলাকার মানুষ অজানা আশঙ্কায় সময় কাটাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আটকে পড়াদের যেন সুস্থভাবে উদ্ধার করা হয়।’

বাগাতিপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাইমিনা শারমিন বলেন, ‘স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমরা জয়ের পরিবারের খোঁজ নিয়েছি। প্রথমে খবরটি তারা নিশ্চিত না হলেও আমরা এ বিষয়ে তাদের সাহায্য করেছি। আমরা সার্বিক খোঁজখবর রাখছি।’

 

সম্পর্কিত

মাত্রই প্রকাশিত