শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

বেরোবিতে তিস্তা ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তা ইভানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে হলে থাকার অভিযোগ

বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরে সদ্য প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি তিস্তা ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল আমিনের (ইভান চৌধুরী) বিরুদ্ধে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছয় তলার ৬০১ নম্বর কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে অবস্থান করার অভিযোগ উঠেছে।

লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী আল আমিন দুই বছর আগে পড়াশোনা শেষ করে সম্প্রতি তিস্তা ইউনিভার্সিটিতে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিলেও এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ছাড়েননি বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ইভান চৌধুরী’ নামে পরিচিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (বেরোবিসাস) সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল আমিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখনও সাংবাদিক পরিচয়েই প্রভাব খাটিয়ে চলেছেন। ফলে চাকরিরত অবস্থায়ও তিনি বর্তমানে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর (চ্যানেল ২৪ অনলাইন)-এর সংবাদদাতাসহ ১০-১২টি অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।

আরও একটি সূত্রে জানা যায়, ইভান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘আস্থাভাজন’ হওয়ায় প্রশাসনের প্রশ্রয়ে হলের আবাসিক সুবিধা নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণরুমের তিন শিক্ষার্থী জানান, অবৈধভাবে সাবেক শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবী আরামে রুমে থাকেন। আর আমরা হলে আসন বৈধ করেও নিজের আসনে না থেকে গণরুমে থাকতে হয়। বিষয়টি প্রভোস্টকে বারবার জানালে শুধু আশ্বাস দেন রুমের ব্যবস্থা করে দিবেন। তৃতীয় বর্ষ শেষ করলাম গণরুমে থেকে। এখনও রুম পরিবর্তন হলো না!

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাসেল রানা বলেন, প্রভোস্টের কাছে চারবার আবেদন করেছি রুম পরিবর্তনের জন্য। তিনি শুধু আশ্বাস দেন। কিন্তু বিবাহিত, সাবেক শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও পড়াশোনা শেষ হওয়া ক্ষমতাশীন দলের অনেক ছাত্রনেতা হলের সিঙ্গেল সিটে থাকেন।

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী হেলাল মিয়া বলেন, আমরা এক রুমে চৌদ্দজন থাকি। এখানে পড়াশোনার কোনো পরিবেশ নেই। আমাকে এক চাকরীজীবীর রুমে দেওয়া হলেও সেখানে আমি উঠতে পারিনি। আমার স্থান এখন গণরুমে।

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী জানান, এক সিটে একটি আলাদা বিছানা যুক্ত করে আমরা তিনজন থাকি। সেখানে আমরা তিনজনই লিগ্যাল হলেও এক বেডে তিন সিটের ভাড়া দিতে হচ্ছে।

অনুসন্ধান সূত্রে আরও জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করলে সব সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন হলের ছাত্রনেতারা। যারা প্রথম বর্ষে রাজনীতি করেছেন, তারা অনেকেই সিঙ্গেল বেড নিয়ে আছেন। ফলে রাজনীতি না করা শিক্ষার্থীরা অনার্স-মাস্টার্সের শেষ বর্ষে পড়েও ডাবল সিট ও গণরুমে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. বিজন মোহন চাকির কাছে চাকরীজীবীর হলে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, মাস্টার্স শেষ করার পর কারও হলে থাকার সুযোগ নেই। যারা চাকরি করেন তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। তবে এমফিলের ছাত্র হলে থাকতে চাইলে প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে থাকতে হবে।

অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক পরিচয়ে চলেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে হলের প্রভোস্টকে অনুরোধ করব ব্যবস্থা নিতে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইভান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আমি চাকরি কবে থেকে শুরু করেছি সেটা জানো? কবে থেকে শুরু করছি সেটা বলো। আরেকটু জেনে ফোন দিও। হলে খোঁজ নাও আমার সিট আছে কি-না। আমার বিষয়ে প্রশাসন কী বলেছে, বলো? তুমি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করবে— আমার মেস নেওয়া আছে কি-না… কোথায় নেওয়া আছে… মেস কবে থেকে নেওয়া হয়েছে… বুকিং দিয়েছি। হলে ছোটভাইয়ের সিটে আছি তুমি দেখো…।

এ দিকে মো. আল আমিনের (ইভান চৌধুরী) বিষয়ে তিস্তা ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আতাউর রহমান তার তিস্তা ইউনিভার্সিটিতে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সম্পর্কিত

মাত্রই প্রকাশিত