সোমবার, ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
সোমবার, ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

বগুড়ায় কফিনে প্রবাসীর বাড়িতে লাশ

 

হাবিবুর রহমান (বগুড়া ) প্রতিনিধি: বগুড়া জেলার কাহালুতে মালয়েশিয়া প্রবাসী শফিকুল ইসলাম (৫২) দীর্ঘ ৩২ বছর পর লাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।

আজ শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ৯ টার দিকে ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে মৃত্যু শফিকুলের গ্রামের বাড়ি কাহালু উপজেলার মালঞ্চা ইউনিয়নের ভালশুন দক্ষিণ পাড়া গ্রামে এসে পৌঁছে।

শফিকুল গত ১১ নভেম্বর সকালে কুয়ালালামপুর সিটির যালান এমবি এলাকায় একটি ফ্লাট বাসায় বসবাসরত অবস্থায় মারা যান। জানা গেছে শফিকুল ১৯৯১ সালে চাকুরীর সুবাদে মালয়েশিয়ায় যান । সে কুয়ালালামপুর সিটির যালান এমবি এলাকায় অবস্থান করে চাকুরি করতো। পারিবারিক বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশের কারো সাথে তার কোন যোগাযোগ ছিল না। তার মা মারা যাওয়ার পর থেকে সে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমন কি দীর্ঘ ৩২ বছরের মধ্যে একবারের জন্য দেশে আসেনি বা তার জীবিত পিতার সাথেও কোন সম্পর্ক রাখেনি।

শফিকুল তার পাসপোর্টে তার সঠিক নাম না দিয়ে নাম দেয় বেলাল ইসাহাক এবং ঠিকানা দেয় বগুড়া শহরের শাকপালা। সঠিক ঠিকানা না থাকার কারণে মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসীরা তার মরদেহ দেশে পাঠানো নিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। পরে গুগলের মাধ্যমে অনেক চেষ্টা করে সঠিক ঠিকানা নিশ্চিত করার পর বাংলাদেশের মালয়েশিয়ান দূতাবাসের মাধ্যমে তার মরদেহ দেশে পাঠানো হয়।

আরোও জানা যায় দেশে বা বিদেশে তার কোন স্ত্রী সন্তান ছিলনা। প্রবাস জীবন সে একা একাই কাটাতো। প্রথমে তার মৃত্যুর সংবাদটি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজার উপজেলার আব্দুল কাইয়ুম নামের এক মালয়েশিয়া প্রবাসী শফিকুলের মৃত্যুর সংবাদ এবং সঠিক ঠিকানার বিষয়ে শফিকুলের ছবিসহ কাইয়ুম তার মোবাইল নাম্বার দিয়ে নিজের ফেসবুক একাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন।

পরে তিনি অনেক চেষ্টা করে শফিকুলের ঠিকানা উদঘাটন করে দেশে তার মরদেহ পাঠানের ব্যবস্থা করেন। আব্দুল কাইয়ুম জানান তারা একই ফ্লাটে বসবাস করলেও শফিকুলের সাথে তার তেমন একটা পরিচয় ছিল না। কাইয়ুম আরোও জানায় শফিকুল সেখানে একটি কোম্পানিতে চাকুরি করতো। সম্প্রতি ওই কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৪/৫ মাস হলে সে বেকার হয়ে পড়ে।

 

এভাবেই সে বেকার অবস্থায় সেখানে দিন কাটাচ্ছিল। গত ১৮ নভেম্বর সকাল পৌঁনে ১০ টার দিকে তার রুমে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। কাইয়ুম জানায় তিনি সহ কয়েক প্রবাসী মিলে শফিকুলকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কাইয়ুম আরোও জানায় মালয়েশিয়ায় পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে হার্ট এ্যাটাকে তার মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে শফিকুলের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি ভালশুনে আনার পর আজ সকাল ১১ টার সময় কফিনের মুখ খোলা হয়। সেখানে তাকে এক নজর দেখার জন্য ভালশুন গ্রামসহ আশের পাশের গ্রামের অনেক মানুষ কফিনের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বুকফাটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে আত্নীয়-স্বজন।

আজ শুক্রবার বাদ জুম’আ ভালশুন ঈদগাঁ মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত