শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

ফেইসবুক হতে পারে ভাল কাজের মাধ্যম -এস আলম

ফেইসবুক নিয়ে অনেকেই অনেক রকম নেতিবাচক মন্তব্য করেন। অনেকের কাছে খারাপ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত এবং অনেকের কাছে ইতিবাচক, উপকারী ও সাফল্যের মাধ্যম। দুধ বেচে যেমন মদ খাওয়া যায় আবার মদ বেচেও দুধ কেনা যায়। ফেইসবুকও ঠিক তেমনি একটি মাধ্যম যেখানে ভাল এবং মন্দ দুটোই বিদ্যমান। যে যেভাবে গ্রহন করে সে সেভাবে ফল ভোগ করে।

১. আমি ২০১৭ সালে যখন ফেইসবুক একাউন্ট ওপেন করি ঠিক তখনো পুরোপুরি ব্যবহার করতে শিখি নাই। সামনে যা আসতো তাই দেখতাম। অনেক খারাপ ছবি ভিডিও চলে আসতো তখন ভাবতাম আসলেই ফেইসবুক খারাপ। এভাবে বেশ কিছু দিন শুধু শুধু ছবি ছাড়তাম, মানুষের ছবি দেখতাম। সামনে যা আসতো তাই দেখতাম। লাইক, কমেন্ট, ইমুজি এসব বুঝতামনা। ভূল ইমুজি, লাইক, কমেন্টের কারনে অনেকের গালিও হজম করতে হয়েছে। ঠিকঠাক তেমন লেখাও জানতামনা। যখন ফেইসবুকের ব্যবহার কিছুটা বুঝতে শিখলাম তখন থেকেই আমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামাজিক কাজ গুলো ছবি ও লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে থাকি। অনেক ভাল মানুষের সাড়া পেলাম। লেখালেখি ও সামাজিক কাজের জন্য আমাদের কুড়িগ্রামের রনো ভাই আমাকে দারুন প্রেরণা দিতেন। এভাবে সাড়া পেতে পেতে আমি লেখা চালাতে থাকলাম। তিস্তা, ধরলা, ব্রক্ষ্মপুত্র নদী ভাঙন সমস্যা নিয়ে লেখালেখি, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা তুলে ধরা, গরীবের সাহায্য, চিকিৎসার সাহায্য, ঘরের সাহায্য, খাদ্যের সাহায্য, শিক্ষার সাহায্য, স্বাবলম্বী করণ প্রোজেক্ট, মুহুর্তেই রক্ত ম্যানেজ এসব ফেইসবুকে তুলে ধরতে ধরতে ৯০% সমস্যা গুলো ফেইসবুকের প্রচার থেকেই ডোনার ম্যানেজ হয়ে সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। আবার সাথে সাথেই ফিডব্যাক-পোস্ট রিভিউ দিতাম পরিচিত বা অপরিচিত দাতাগণ বিশস্ত হয়ে পরে আবার এরকম সমস্যা বা সাহায্যর পোস্ট দেখলেই সাথে সাথেই পাশে দাঁড়াত অনায়াসেই।

এভাবে চলতে চলতে ২০১৭ সাল থেকে আজ ২০২৪ সাল পর্যন্ত শুধু মাত্র ফেইসবুক ব্যবহার করে আমার নিজ এলাকা, উপজেলা সহ কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় এবং দেশের অন্য জায়গাতেও প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কাছে বিভিন্ন রকম সাহায্য-সহযোগিতা পৌঁছে দিতে পেরেছি এবং দুটো পাবলিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছি ও স্বনামধন্য কয়েকটি স্থানীয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। কাজের ধারাবাহিকতায় আমাদের একটি উপজেলা বেইজ সংগঠন “মানবতার বাতিঘর” প্রতিষ্ঠা হয়েছে। দারুনভাবে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে। অসংখ্য মানবিক মানুষের সাথে পরিচিত হয়েছি, ভালো কাজে কানেক্টিভিটি বেড়েছে, অসংখ্য ভালো মানুষের কমিউনিটির সাথে আজ যুক্ত হতে পেরেছি। আজ পর্যন্ত যেকোন ভালো কাজে সরব রেসপন্স পাচ্ছি। ফেইসবুক থেকেই আমাদের সামাজিক কাজের ৯০% ফান্ড ম্যানেজ হয়ে থাকে। অনেক দাতা ফেইসবুকের মাধ্যমেই আমাদের উপর আস্থাশীল হয়ে এগিয়ে আসেন। এটাই ফেইসবুক থেকে আমার অর্জন এবং প্রেরণা। আলহামদুলিল্লাহ।

২. অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং মাদকের সহজলভ্যতা দুটোর নির্ভরতা মিলেই একেবারে বিংশ শতাব্দীর পরে এসে আমরা মানুষ হিসেবে অনেক কিছু এরিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। প্রযুক্তির ছোঁয়া সামগ্রিক সভ্যতায় উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের জীবন ব্যবস্থা অনেক সহজ করে দিয়েছে। এতো উপাকারীতার মধ্যেও অনেক কঠিন করে তুলেছে মানুষ হিসেবে আমাদের যা দায়িত্ব কর্তব্য। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে এবং সামাজিক জীব হিসেবে সমাজে আমাদের যা কাজ ও দায়বদ্ধতা আমরা অনেকটাই তা বেমালুম ভুলে গেছি। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে আমাদের জীবন অনেক সহজ হয়েছে বটে কিন্তু আমরা মানুষ এবং মানুষের যে মন আছে মনুষ্যত্ব আছে তা নিতান্তই বিকলের পথে বহুদূর এগিয়েছে।

প্রযুক্তির বিশেষ আকর্ষন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ফেইসবুক। ২০০৪ সালে ফেইসবুকের যাত্রা এবং ২০২২ এ এসে তার কার্যকারিতা ও জনপ্রিয়তা যেন আকাশচুম্বী। মুহূর্তেই দুনিয়ার খবরা খবর থেকে শুরু করে অনলাইন ভিত্তিক যোগাযোগ মানুষের জীবনে নিত্যপন্যের মতই জায়গা করে নিয়েছে। জীবনকে যেমন হাতের মুঠোয় সহজ করেছে, জীবনকে তেমন অলস আর বিকল করেছে মনুষ্যত্বকে। মনকে করে তুলেছে ইস্পাত কঠিন। ইন্টারনেট দুনিয়ায় আঙুল স্পর্শ করলেই যেমন ভালো ছবি-কথা ভেসে ওঠে ঠিক তেমনি খারাপ ছবি-কথা চোখের সামনে ভাসে। মানুষের প্রবৃত্তি খারাপের দিকেই বেশি ঝুঁকে থাকে আর যেহেতু এখানে অতি সহজেই মিলছে সেহেতু বয়ষ্ক-তরুণ ও কোমলমতি নর-নারী অল্পতেই আকৃষ্ট হচ্ছে যার ফলাফল বহন করছে এক বিবেকহীন জড়বস্তু সমাজ। মানুষ যেমন এভাবে যান্ত্রিক হয়েছে ঠিক মন-মানসিকতা যন্ত্রের মতই ব্যবহার করে থাকে।

এই যান্ত্রিকতার ফলে এখন আর আমরা চিঠি লেখিনা, বই পড়িনা, মঞ্চ নাটক, যাত্রাপালা, থিয়েটার, শিল্পকর্ম, সিনেমা হল, আড্ডা, কাচারি ঘর, খেলাধুলা, উন্মুক্ত বিনোদন এসবের ব্যবহারিক আজ বিলুপ্ত প্রায়। মানুষ যেখানে শিখবে, বুঝবে, প্রাকটিক্যালি বাস্তবায়ন করবে সে পন্থা গুলো ধীরে ধীরে রুদ্ধ হওয়ার কারনে মানুষ তার নিজস্বতা হারিয়ে ফেলছে যার ফলে সমাজ ও পারিবারিক জীবনে অসামাজিকতা, বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, অন্যায়, ব্যাভিচারে মানুষ লিপ্ত হয়েছে খুব সহজেই।

৩. পরিশেষে কালের পরিক্রমায় আধুনিক বিবর্তনে মানুষ যেমন আরাম প্রিয় আর সহজতা গ্রহন করে অত্যাধুনিক হলেও জীবনের সৌন্দর্য কঠিন হয়েছে বিস্তর। দিনে দিনে মানুষ তার নিজস্বতা হাড়াতে হাড়াতে ১০০ বছর আগের সেই স্মৃতি হাতড়াবে। খুঁজে ফিরবে সোনালী অতীত, সাদাকালো যুগ, সেই ছেলেবেলা, গোল্লাছুটের মাঠ এবং বিংশ শতাব্দীর আগে তারও আগে, তারও আগে ফিরে আসবে। সময় আর সুযোগের অপেক্ষায়। মানুষ, মানুষ হিসেবে ফিরুক। মানুষ ফিরুক তার নিজস্বতার উপর। মানুষ ফিরুক তার মননশীলতায়। সমাজে আমাদের দায়বদ্ধতা কি, এসব আমরা ভূলে না যাই। শেঁকড় না ভূলি।

আমরা সবসময় ভালোটা গ্রহণ করব এবং খারাপটা বর্জন করব তাহলে আমরা ভাল কিছু করতে পারব।

আসুন ভালো থাকি।ভালো রাখি।

 

লেখকঃ প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি 

মানবতার বাতিঘর

উলিপুর, কুড়িগ্রাম। 

সম্পর্কিত

মাত্রই প্রকাশিত