মার্চ ২৩, ২০২৩ ১:২৮ বিকাল



ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসক সহ অনেকের আন্তরিকতা প্রচেষ্টা থাকা স্বত্বেও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ চিকিৎসা সেবার জন্য এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপর নির্ভরশীল। এছাড়া পার্শ্ববর্তী সাঘাটা ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ চিকিৎসা নেন এ হাসপাতাল হতে। চরাঞ্চল বেষ্টিত এ উপজেলার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে। প্রতিদিন স্বল্প আয়ের মানুষেরা এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে। তাদের চিকিৎসার জন্য একমাত্র ভরসা এ হাসপাতালটি। বিগত সময়ে বিভিন্ন কারণে হাসপাতালটিতে অচলাবস্থা তৈরি হলেও বর্তমানে মাননীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি মহোদয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ইউএইচএফপিও, আরএমও, চিকিৎসক এবং সিনিয়র স্টাফনার্স সহ অন্যান্য কর্মচারীদের আন্তরিক সেবাদানের প্রচেষ্টায় জনগণের মাঝে আস্থা ফিরে আসছিল।
কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১১ সালেক ৩১ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নতি হলেও এখানে জনবল রয়েছে ৩১ শয্যার।
হাসপাতালটিতে ৯ জন ডাক্তারের স্থলে মাত্র ৪ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার সহ, ৫ জন জুনিয়ার কনসালট্যান্টের মধ্যে গাইনী এন্ড অবস, মেডিসিন, সার্জারি ও এনেসথেসিয়া কনসালটেন্টের পদ শূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন হলো ডেন্টাল সার্জন ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) পদ দুটি ফাঁকা পরে রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি সহ মাতৃস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে ৪ জন মিড ওয়াইফের ৩ জন নিয়মিত কাজ করছেন ১ জন জেলা হাসপাতালে ডেপুটেশনে কাজ করছেন। এক্ষেত্রেও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্খিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
ক্যাশিয়ারের ১টি পদ থাকলেও সেটি শুন্য রয়েছে। পরিসংখ্যান পদটি ফাঁকা হলেও এ পদে এখনও পদায়ন করা হয়নি। ফার্মাসিস্ট এবং স্টোর কিপারের ২টি পদ ফাঁকা রয়েছে।
এখানে নার্সের ১৪ টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১২ জন, অফিস সহকারী ৪ টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১ জন। নিরাপত্তা প্রহরী ২ টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১ জন, বাবুর্চি ২ টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ১ জন। টিকিট কাউন্টারে ‌ বাধ্য হয়ে এমএলএসএস দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি নজরে এসেছে তা হল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সমস্যা। পরিচ্ছন্ন কর্মবীর মোট পদ ৫ টি। এর মধ্যে ১ জন ইতিমধ্যে ডেপুটেশনে জেলা হাসপাতালে কর্মরত রয়েছে। ১ জন নিয়মিত রংপুরে বসবাস করে এবং কাজ না করেই বেতন ভাতা উত্তোলনের জন্য নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করে বলে জানা যায়। বাকি ৩ জনের ১ জন চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এমতাবস্থায় মাত্র ২ জন অনিয়মিত কাজ করলেও ডেঙ্গু সহ বর্তমান সংকটকালীন সময়ে পুনরায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও ১জন পরিচ্ছন্ন কর্মীকে জেলায় বদলীর আদেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কার্যত ১ জন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করছে। এভাবে হাসপাতালে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা একেবারেই দুরূহ হয়ে পড়েছে।
উদাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকলেও রোগীদের সেবা প্রদানে এখানে কর্মরত ডাক্তার-নার্সরা আন্তরিক। এখানে অনেক পদ শুন্য রয়েছে। সংকট উত্তোরণে সম্প্রতি হাসপাতালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি মহোদয়ের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ডেপুটেশনে থাকা ব্যক্তিদের অজ্ঞাত কারণে অত্র হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে না।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি.এম. সেলিম পারভেজ বলেন, হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও এখনও জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। চরাঞ্চল বেষ্টিত অনগ্রসর এ উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অতিদ্রুত ৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ প্রদান করতে তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোঃ রফিকুজ্জামান জানান, ১২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স ব্যতীত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জনবলের সংকট রয়েছে। বিষয়টি মাননীয় ডেপুটি স্পিকার মহোদয় এর সভাপতিত্বে উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিংএ আলোচনা হয়েছে এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার ও সাপোর্ট ষ্টাফ নিয়ে সাধ্যমত সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। ইতিপূর্বে বিভিন্ন কারণে হাসপাতালটিতে অচলাবস্থা তৈরি হলেও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত আরএমও, চিকিৎসক এবং নার্স সহ অন্যান্য সকলের আন্তরিক সেবাদানের মাধ্যমে এই হাসপাতালের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। আমি সহ আমার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে আমরা সার্থকভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। একইভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে রয়েছি।
ফুলছড়ি বাসীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন জনগন।



Comments are closed.

      আরও নিউজ