ফেনী জেলার সোনাগাজীতে আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ জন আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। মামলায় গ্রেফতার ২১ জন আসামির মধ্যে ৫ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই রায় ঘোষণা করে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। মামলার সাত মাসের মাথায়, ৬১ কার্যদিবস শুনানির পর এ রায় ঘোষণা করা হলো। বেলা ১১টার দিকে আসামিদের কাঠগড়ায় তোলার পর বিচারিক কাজ শুরু হয়। বিচারক মামুনুর রশীদ এই রায় ঘোষণার আগে আসামিরা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে বলে জানান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলেন, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মাকসুদ আলম ওরফে মকসুদ কাউন্সিলর, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন্নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, রুহুল আমিন,মহিউদ্দিন শাকিল, মোহাম্মদ শামীম।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণাকে ঘিরে সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
২০ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ১৬ আসামির বিচারকাজ। ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্য নেয়ার পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর রায়ের দিন ঠিক করে আদালত।
২৯ মে পিবিআই ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষে মাদরাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনকে আসামি করে মামলার ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করে।
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাত শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনলে তার মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় যৌন হয়রানির মামলা করেন। সেই মামলায় অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর থেকে মামলা তুলে নুসরাত এবং তার পরিবারের ওপর নানাভাবে চাপ আসতে থাকে।
৬ এপ্রিল নুসরাত মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে কৌশলে মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। পরদিন নুসরাত ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসকদের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী থানায় মামলা করলেও পরে সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
নুসরাত হত্যার মামলটি প্রথমে করছিলেন সোনাগাজী থানার পরিদর্শক কামাল হোসেন তদন্ত করলেও; কিন্তু ওই থানার ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সময় গাফিলতির অভিযোগ ওঠায় তদন্তভার নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)।