রবিবার, ২২শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
রবিবার, ২২শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

নিয়োগ জালিয়াতি: পীরগঞ্জে সরকারি কলেজের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু দুদকের

উত্তরবঙ্গের সংবাদ ডেস্ক: রংপুরের পীরগঞ্জের সরকারি শাহ রউফ কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

অভিযুক্তরা হলেন: উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের মোছা. মোসতারী পারভীন, মো. সাগর মন্ডল ও শাহ মো. সোয়েব মিয়া।

জানা যায়, ২০১১ সালে শাহ রউফ কলেজ এমপিওভুক্ত হওয়ার পূর্বে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে দুজন শিক্ষক নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হলেও নিয়োগ পান তিনজন।

অনুসন্ধান সূত্রমতে, বর্তমানে এই বিভাগের প্রভাষক মোছা. মোসতারী পারভীন ২০১১ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এমএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু তৎকালীন অধ্যক্ষের সঙ্গে আত্মীয়তার খাতিরে তিনি এমএসসির প্রথম শ্রেণির জাল সনদ দেখিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এ ছাড়াও, অন্যান্য প্রার্থীদের নম্বরপত্রের প্রতি পাতায় সুপারিশকারীর স্বাক্ষর থাকলেও তার নম্বরপত্রে সুপারিশকারীর কোনো স্বাক্ষর নেই।

একইভাবে নিয়োগ পাওয়া ওই বিভাগের অপর শিক্ষক মো. সাগর মন্ডলের নম্বরপত্রেও নিয়োগ বোর্ডের কারো সুপারিশ করে স্বাক্ষর অস্তিত্ব নেই। পাশাপাশি, প্রথম দিকের রেজুলেশনের সঙ্গে সদ্য জমা দেওয়া রেজুলেশনের অসংগতি থাকায় কলেজটি সরকারি হওয়ার পর সাগর মন্ডলের নামে পদ তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

অন্যদিকে, ডিগ্রি শাখার তৃতীয় শিক্ষক শাহ মো. সোয়েব মিয়া ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পেলেও রেজুলেশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে শিক্ষার্থীসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দুজন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয় স্নাতক (সম্মান) কোর্সে। কিন্তু সোয়েব মিয়ার রেজুলেশনে ঘষামাজা করে তীর চিহ্ন দিয়ে ডিগ্রি কোর্সে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হয়। এতে প্রথম এবং দ্বিতীয় পদ সৃজন তালিকায় তার নাম আসেনি।

ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পদ তৈরি সংক্রান্ত সভার মন্তব্য তালিকায় জনবল কাঠামো অনুযায়ী শাহ মো. সোয়েব মিয়ার প্রাপ্যতা নেই বলে উল্লেখ করা হলেও তা উপেক্ষা করে সম্প্রতি পদ তৈরিতে তার নথিপত্র আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মুসতারী পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে সাগর মন্ডল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রয়োজনে পদ সংখ্যা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করা ছিল বলে দাবি করেন। তবে রেজুলেশনে ভিন্ন কথা লেখা থাকার বিষয়টি তিনি অবহিত নন বলে জানান। অপর শিক্ষক শাহ মো. সোয়েবের মুঠোফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

বিষয়টি নিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাজনুর ইমাম মো. সাইফুল নেওয়াজ শাকিল বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগের সময় আমি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছিলাম না। তাই এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। তবে এর আগে কলেজের আট শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হলে তারা বিষয়টি নিয়ে আদালতে যান এবং আমার জানামতে সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়। তবে তাদের চাকরি নেই।

প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালে পীরগঞ্জ উপজেলা সদরে শাহ আবদুর রউফ কলেজ প্রতিষ্ঠার পর এমপিওভুক্ত হয়ে ডিগ্রি অধিভুক্ত হয়। কলেজে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষে নয়টি বিষয়ে পাঁচজন করে মোট ৪৫ জন প্রভাষক এবং নয়জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হলেও ওই প্রভাষকরা কখনওই এমপিওভুক্ত কিংবা সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবেন না— বলে নিয়োগের শর্তে উল্লেখ করা হয়।

পরে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজে কর্মরত জাল সনদধারী আট শিক্ষক শনাক্ত হয়েছিলেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় মামলা করে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করে।

এরপর ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে নতুন করে মোট ৭২ জনের পদ তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ৭০ জন যোগদান করেন। বাকি দুজনের পদ স্থগিত রাখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর আবারও ২৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ তৈরি করা হয়। বর্তমানে সেই ২৩ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে চলমান রয়েছে।

উবস/আরএ

সম্পর্কিত