মিজানুর রহমান কুড়িগ্রাম:নাগেশ্বরীর শিয়ালকান্দায় এক তালাকপ্রাপ্ত নারীর ঘরে কাঠ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম কে আটকের পর স্থানীয় আব্দুল জলিল ও নুরুল ইসলাম (নুরু) মাস্টারের নেতৃত্বে সালিশ বৈঠকে তালাকপ্রাপ্ত নারীর ঘরে থাকার অপরাধের শাস্তি হিসেবে ৬৭হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হলেও ওই টাকার মধ্যে ৩০হাজার টাকা তালাকপ্রাপ্ত পরিবারকে দিয়ে অবশিষ্ট টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সালিশকারীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ডের শিয়ালকান্দা (হুরমুজটারী) গ্রামের আসাদ আলীর তালাকপ্রাপ্ত কন্যা আলমিনা খাতুনের সাথে কুটি নাওডাঙ্গা (আমিরটারী) গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী শাহাদত আলীর দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ সম্পর্ক চলে আসছিল। গত (১৩সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় আলমিনা খাতুনের ঘরে শাহাদত আলী কে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা শাহাদত কে আটক করে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সন্তোষপুর ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল ও ২নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সৈয়দ আলী এবং রামখানা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম (নুরু মাস্টার)’র নেতৃত্বে স্থানীয়রাসহ ইউপি সদস্য তাজুল ইসলাম, মোস্তফা মেম্বার বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ভুক্তভোগীর বাড়িতে সালিশ বৈঠকে আলমিনার ঘরে থাকার অপরাধের শাস্তি হিসেবে শাহাদত আলীর ৬৭হাজার টাকা জরিমানা করে। সালিশ বৈঠকের জরিমানার টাকা নুরুল ইসলাম (নুরু মাস্টার) কে দেয়া হয়। এদিকে জরিমানার ৬৭হাজার টাকার মধ্যে ৩০হাজার টাকা আলমিনার মা গোলাপীর বেগম কে দেয় এবং অবশিষ্ট জরিমানার ৩৭হাজার টাকা আব্দুল জলিল এবং রামখানা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম (নুরু মাস্টার) ও তার লোকজন ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে উল্টো আলমিনার পরিবারকে চুপ থাকতে ভয়ভীতি দেখান।
সালিশ বৈঠকের আয়োজক আব্দুল জলিলের মুঠোফোনে কথা হলে সালিশ বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, জরিমানার টাকা নুরুল ইসলাম (নুরু মাস্টার) ভুক্তভোগীর পরিবার কে দিয়েছেন তো। এ বিষয়ে নুরু মাস্টারের সাথে কথা বলেন। সৈয়দ আলীর ‘মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, শালিস বৈঠক হয়েছে তবে নুরু মাস্টার ভুক্তভোগী পরিবার কে সব টাকা দেয়ার কথা। নুরুল ইসলাম (নুরু মাস্টার)র ‘মুঠোফোনে কথা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জরিমানার টাকা আলমিনার মা গোলাপী বেগম কে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, সালিশ বৈঠকে শাহাদত আলীর ৬৭হাজার টাকা জরিমানা করা হলেও আলমিনার মা গোলাপীর বেগম কে ৩০হাজার টাকা দেয়ার কথা জানি। বাকী টাকা নুরু মাস্টারের নেতৃত্বে আব্দুল জলিল, সৈয়দ আলী ও তার লোকজন ভাগবাটোয়ারা করে নেয়।
আলমিনা খাতুনের মা গোলাপী বেগমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে ঘটনা স্বীকার করে বলেন, নুরু মাস্টার এখনও জরিমানার টাকা আমাকে দেয় নাই। রিপোর্টার এর পরিচয় পাওয়ার পরে তিনি বলেন, নুরু মাস্টার আমাকে ৩০হাজার টাকা দিয়েছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এ ধরণের কাজে লিপ্ত হওয়া বিধিবহির্ভূত। তদন্ত সাপেক্ষে রামখানা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিব্বির আহমেদ বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।