মার্চ ২৬, ২০২৩ ১২:২৭ সকাল



দলে আসে নাই নতুন নেতৃত্ব; নীলফামারীতে ১৬বছরেও হয়নি যুবলীগের সম্মেলন

স্বপ্না আক্তার, নীলফামারী :
দীর্ঘ ১৬বছরেও অনুষ্ঠিত হয়নি নীলফামারী জেলা যুবলীগের কমিটি। ফলে মূল নেতৃত্বে আসতে পারেননি নতুন কোন মুখ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সম্মেলনের ঘোষণা আসায় মাঠে নেমেছেন পুরাতন ও নতুন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। তবে জেলা যুবলীগের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে জেলা কমিটির সম্মেলন। বিগত দিনে কেন্দ্র থেকে তেমন নির্দেশনা না আসায় সম্মেলন দেয়া সম্ভব হয়নি। নতুনভাবে কেন্দ্রে দায়িত্ব আসায় দলকে সুসংগঠিত করতে তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলন দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে নীলফামারী জেলায় যুবলীগের সভাপতি পদে ৭জন আর সাধারণ সম্পদক পদে ১৩জন নেতাকর্মী কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন তাদের জীবণ বৃত্তান্ত।
বর্তমান জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সজল কুমার ভৌমিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আল-ফারুক পারভেজ উজ্জল, যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম বাবু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাঈম শাহরিয়ার পিউ, সুদির চন্দ্র রায়, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি তানভীর হাফিজ কেন্দ্রে সভাপতি পদের জন্য জীবণ বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে জীবণ বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন যুবলীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর সাদেক তুহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফি সবুজ, জেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক শাহ আনোয়ার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নোহেল রানা নাঈম ইসলাম জীবন সহ দলের আরও ৮জন নেতাকর্মী।
জানা যায়, শিল্পকলা মিলনায়তনে ২০০৫সালের ৫ই জুন জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সেসময়ে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিল। তৎকালীন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে সভাপতি পদে এ্যাডভোকেট রামেন্দ্র বর্ধণ বাপ্পী আর সাধারণ সম্পাদক পদে শাহিদ মাহমুদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর ৭১সদস্য বিশিষ্ঠ জেলা কমিটি ঘোষণা হয়েছিলো ২০০৮সালে। তারপর থেকে আজ অব্দি কোন কমিটি গঠন হয়নি।
তবে মাঠ পর্যায়ে কয়েকজন নেতা কর্মীর সাথে কথা হলে তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় নেতৃত্বে আসতে পারে নাই নতুন কর্মীরা। কমিটির রদ বদল হলেই নেতৃত্ব বাড়বে।
সভাপতি পদে আবেদনকৃত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আল-ফারুক পারভেজ উজ্জল বলেন, সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দের হাতে নেতৃত্ব না থাকায় নীলফামারীতে যুবলীগের করুণ অবস্থা। নীলফামারীসহ গোটা জেলায় যাদের হাতে যুবলীগকে সুফে দিয়েছে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তবে যুবলীগ তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে, যদি ছাত্রলীগের পুরাতন ও নবীণদের সম্বনয়ে কমিটি গঠিত হয়। এরমধ্যে জীবণ, সজল,নোহেল, তুহিন, পিউ, তানভির, সবুজসহ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেয়া নেতাদের যুবলীগের নেতৃত্বে আনা হলে যুবলীগ একটি শক্তিশালী সংগঠন রূপে আত্মপ্রকাশ ঘটাবে।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আবেদনকৃত সবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নোহেল রানার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কমিটি গঠন না হওয়ার কারণে জেলা যুবলীগের কমিটি প্রায় নিষ্কৃয় হয়ে পড়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার জয় নিশ্চিত করতে নীলফামারীতে জেলা যুবলীগে তরুণ ও গতিশীল নেতৃত্ব অপরিহার্য।
জেলা যুবলীগের সভাপতি হতে আগ্রহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সজল কুমার ভৌমিক জানান, মূলত দীর্ঘদিন ধরে একই নেতৃত্ব ও তেল বাজির কারণে যুবলীগের করুণ অবস্থা। নতুন কমিটি পারে একমাত্র যুবলীগকে নতুন করে গড়তে।
জেলা যুবলীগে সভাপতি হিসেবে আগ্রহী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি তানভীর হাফিজ জানান, দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগের সাবেকরা ঝিমিয়ে শুণ্যতায় ভুগছেন।এখন সময় এসেছে দলে যুক্ত হওয়ার। আমি সভাপতি হিসেবে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। যদি দায়িত্ব পাই তাহলে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করবো। তবে সংগঠনকে গতিশীল করতে যে পদেই দেয়া হোক না কেন আমি আদর্শচ্যুত হবো না।
তবে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন সম্মেলন হয়নি ঠিকই কিন্তু সাংগঠনিক ভাবে যুবলীগ সফল। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে প্রতিটি কর্মসুচী সফলভাবে পালন করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে কোন গ্রুপিং বা বিভক্তি নেই। আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমিও চাই দ্রুত সম্মেলন হোক। সামনে রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলন শেষে হয়তো জেলা সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী যুবলীগের রংপুর বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল পারভেজ জানান, নীলফামারীতে সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বর্ধিত সভা করা হয়েছে। বিরোধী দলে থাকাকালে সে সময়ে দলের জন্য অবদান আমরা অবশ্যই মুল্যায়ন করবো। দলে যারা একনিষ্ঠ, যোগ্য-ত্যাগী এবং যারা অভিমানে চুপ করে রয়েছেন তাদেরও মুল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা নেয়া হয়েছে কেন্দ্রে। সেগুলো যাচাই বাছাই চলছে।



Comments are closed.

      আরও নিউজ