ঢাকা ২৩ মার্চ ২০২০: কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ড দেওয়ার ঘটনায় ডিসি সুলতানা পারভীনসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ওই সাংবাদিকের করা মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।কুড়িগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)-কে এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এরসঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দেওয়া দণ্ড ছয় মাসের জন্যে স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
সাংবাদিক আরিফুলের করা আবেদন শুনানি নিয়ে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ থেকে এ আদেশ দেয়া হয়।
রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।
গত ১৩ মার্চ সাংবাদিককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেয়া সংক্রান্ত সাজার সব নথি তলব করেন হাইকোর্ট। ওই দিন মামলা সংক্রান্ত সকল নথি আজকের (২৩ মার্চের) মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। পাশাপাশি মামলার শুনানি ও আদেশের দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৫ মার্চ বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে সাংবাদিক আরিফ ওই রিটে পক্ষ হয়ে আবেদন করেন। রিট আবেদনে টাস্কফোর্সের নামে ভ্রাম্যমাণ আদালতে আরিফুল ইসলামকে অবৈধ সাজা ও আটক করা কেন সংবিধান পরিপন্থী হবে না এবং তাকে ৫০ লাখ টাকা কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়।
রিটে কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তাদের ভূমিকার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য তলবের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আরিফের বিরুদ্ধে করা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলার নথি এবং টাস্কফোর্স পরিচালনার নথি তলবের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে আরিফুলের বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের দণ্ড দিয়ে রাত ৩টার দিকে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আরিফের স্ত্রী দাবি করেন, মধ্যরাতে কিছু আগন্তুক তাদের বাসায় এসে দরজা ধাক্কাতে থাকেন ও দরজা খুলতে বলেন। আরিফ তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা পরিচয় দেননি। এরপর আরিফ কুড়িগ্রাম থানায় যোগাযোগ করলে থানা কর্তৃপক্ষ তার বাসায় কোনো অভিযান চালানো হয়নি বলে নিশ্চিত করে।
এরমধ্যেই আগন্তুকরা দরজা ভেঙে তার বাসায় প্রবেশ করে। তবে তারা কোনো তল্লাশি অভিযান চালায়নি। আরিফের স্ত্রীর দাবি, আগন্তুকরা ছিল ৬ থেকে ৭ জন। সবাই সশস্ত্র ছিল। তাদের সঙ্গে ১৫-১৬ জন আনসার সদস্য ছিল।
তারা বাসায় ঢুকেই কোনো কারণ না জানিয়ে আরিফকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায়। কয়েকবার গুলি করার হুমকিও দেয় তারা। এর এক ঘণ্টা পর থানা পুলিশ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে খুঁজে পায়। সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আরিফকে এক বছরের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ১৬ মার্চ দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। দেশের প্রায় দুই শতাধিক জেলা-উপজেলায় প্রতিবাদ সমাবেশে ডিসিকান্ডের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি তোলা হয়। বিএমএসএফ’র পক্ষ থেকে পুরো ডিসিকান্ডটি অবৈধ দাবি করে এবং এর সাথে জড়িতদের দ্রূত বিচারের দাবি জানানো হয়।