বগুড়া সংবাদদাতা:
বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদে দুইশ বছরেরও বেশি পুরোনো একটি তরতাজা বটগাছকে ঝড়ে উপড়ে পড়া দেখিয়ে মাত্র ১২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করেছে উপজেলা প্রশাসন। নিলামের পর গাছটি কিনেছেন মোকামতলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রানা। ইতোমধ্যে লোকজন দিয়ে গাছটির বিশাল আকৃতির আটটি শাখা-প্রশাখা ও ডাল কেটে ফেলেছেন তিনি।
জানা গেছে, গত ১৩ নভেম্বর শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভূমি) মো. তাসনিমুজ্জামান মাত্র ১২ হাজার ৭০০ টাকায় নিলামের মাধ্যমে গাছটি বিক্রি করে দেন। ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, সামাজিক বন বিভাগ বগুড়ার গত অক্টোবর মাসের ১ তারিখের ১৯৬৯ নং স্মারক দেখিয়ে গাছটির নিলাম করা হয়। নিলামে ঐতিহ্যবাহী তরতাজা বটগাছটিকে দেখানো হয় ঝড়ে উপড়ে পড়া হিসেবে।বৃহস্পতিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোকামতলা ইউনিয়নের জাবিরপুর খোলাপাড়া গ্রামে ২৫ শতক সরকারি খাস জমির ওপরে রয়েছে বিশালাকৃতির তরতাজা বটগাছ। এটি প্রায় ৪৫ ফুট প্রশস্ত ও উচ্চতায় প্রায় ১০০ ফুট। গাছটির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা কোথাও মাটির সঙ্গে মিশেছে। স্থানীয়রা জানান, গাছটির বয়স দুইশ বছরেরও বেশি। বহু পুরোনো হওয়ায় বগুড়াসহ আশপাশের জেলার অনেক মানুষও গাছটিকে দেখতে আসেন। নিলামের পর ছাত্রলীগ নেতা ও ঠিকাদার রানা গত মঙ্গলবার ১৩ জন কাঠুরে দিয়ে গাছটি কাটা শুরু করেন। ওই দিনই তিনি গাছটির অন্তত আটটি বিশাল আকৃতির শাখা-প্রশাখা ও ডাল কেটে নিয়ে যান। বুধবার মোকামতলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আহসান হাবীব সবুজসহ ছাত্রলীগ নেতা রানা আবারও গাছটি কাটতে আসলে স্থানীয়দের বাধার মুখে কাজ ফেলে চলে যেতে বাধ্য হন। পরে শিবগঞ্জের ইউএনও এসে বটগাছ কাটা বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
সামাজিক বন বিভাগ বগুড়ার উপবন সংরক্ষক মতলুবুর রহমান বলেন, মোকমতলার বটগাছটি তরতাজা ও সবুজ আছে। তিন মাস আগে ঝড়ে গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল। আমরা সেই ডাল নিলামের অনুমতি দিয়েছিলাম। কোনো সবুজ গাছ কাটার সুযোগ নেই। কেউ যদি নিজেরাই গাছকে উপড়ে পড়া দেখিয়ে নিলাম করে সেই দায় তাদের।এ বিষয়ে গাছটি কিনেওয়া ছাত্রলীগ নেতা রানা বলেন, ‘নিলামে আমাকে শুধু কয়েকটি ডাল কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। পুরো গাছ কাটার চেষ্টার অভিযোগ মিথ্যা। প্রজ্ঞাপনে গাছের কথা লেখা ছিল কিনা খেয়াল করিনি।’
এ বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভূমি) তাসনিমুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়া বলতে কিছু গুঁড়ির কথা বলা হয়েছে। কাউকে পুরো গাছ কাটার নিলাম দেওয়া হয়নি।
শিবগঞ্জ ইউএনও তাহমিনা আক্তার বলেন, নিলামে গাছের পড়ে যাওয়া অংশ বিক্রি করা হয়েছে। যিনি ঠিকাদার উনি পুরো গাছই মনে করেছেন। এজন্য কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।