স্টাফ রিপোর্টার মোঃ গোলাম মোরশেদঃগুণগত মান ভালো হওয়ায় জয়পুরহাটের উৎপাদিত আলু মধ্যেপ্রাচ্যসহ ১০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি এলাকার যুবকদের বেকারত দূর হচ্ছে।
জয়পুরহাটে গত তিন বছর লোকসানের পর এই মৌসুমে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। পাশাপাশি দাম ভালো হওয়ায় কৃষকরা এখন বেশ খোশ মেজাজে। বিদেশে আলু পাঠানোর ফলে বিভিন্ন জাতের আলুর চাহিদা বেড়েছে বলে জানান কৃষকরা।
দেশের গণ্ডি পেরিয়ে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, সৌদি আরব, ইন্দোনিশয়া, কুয়েত, নেপাল, জাপান ও রাশিয় এই ১০টি দেশে বাংলাদেশের আলু রপ্তানি হচ্ছে। দেশগুলোতে যাচ্ছে জয়পুরহাটের আলু।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্পসারন সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সাড়ে ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে লাল পাকরি, সাদা পাকরী, জাম, রোমানা, ডায়ামান্ট, কার্ডিনাল, গ্রানোলা, অ্যারিস্টিকসহ বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি জাতের আলু চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে আট লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়ে লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
আলু চাষি ও আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩০ থেকে ৩৫টি বাজারে প্রতিদিন ৮/৯ শ’ মন গ্রানোলা, রোজেটা ও অ্যারিস্টিকসহ বিভিন্ন জাতের আলু বিদেশে পাঠানোর জন্যে কেনা হচ্ছে। এতে ভালো দাম পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।
পাঁচবিবি উপজেলার আমলাগাড়ী গ্রামের আলুচাষী মোঃ রুবেল হোসেন উত্তরবঙ্গ সাংবাদিকে বলেন, এবারে তিনি ৬০ শতক জমিতে গ্রানোলা জাতের আলু চাষ করেন। এতে সবমিলে তার উৎপাদন খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। প্রতি শতকে তিন মণ হারে তিনি মোট আলু পেয়েছেন ১৮০ মণ। তিনি ২৭০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে তার লাভ টিকেছে অন্তত ২৮ হাজার টাকা।
পাঁচবিবি উপজেলার বারকান্দ্রী গ্রামের আলুচাষি মোঃ আহসান হাবিব (সাগর) উত্তরবঙ্গ সাংবাদিকে জানান, তিনি এবার ১৮ বিঘা জমিতে, রোজেটা, অ্যারিস্টিক ও গ্রানোলা জাতের আলু চাষ করতে গড়ে বিঘা প্রতি তার উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার টাকা, ফলন পেয়েছেন ৯৯ মণ, ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি করে লাভ হয়েছে অন্তত চার লাখ টাকা।
চট্টগ্রামের ‘আলাই’ কোম্পানির সুপারভাইজার আনিস উত্তরবঙ্গের সাংবাদিকে জানান, কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন তাকে ৯ মেট্রিক টন আলু কিনে দিতে হয়। এভাবে চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত যে পরিমাণ আলু প্রয়োজন তা তাকে কিনতে হবে। সে হিসাব মাথায় রেখে তিনি আলু ক্রয় করছেন। স্থানীয় বাজার থেকে মানসম্মত এসব আলু কিনে তা বিদেশে রপ্তানি করা হবে বলে জানান তিনি।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় উত্তরবঙ্গসংবাদকে জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আলু বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় ভালো দাম ও উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। আবার বিদেশে আলু রপ্তানি হওয়ায় বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানেরও সুযোগও পাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের আলু বাজারের সম্ভাবনা দিন দিন উজ্জ্বল হবে বলে তিনি আশা করেন।