কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো কুড়িগ্রামের চিলমারী নৌবন্দর হয়ে রপ্তানির উদ্দেশ্যে পণ্য ভারত যাচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের পতাকাবাহী একটি জাহাজে করে ওয়েস্ট কটন (ঝুট) রপ্তানির মধ্য দিয়ে এই রপ্তানি যাত্রা শুরু হয়। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১ টার সময় শান আবিদ-১ নামে একটি বাংলাদেশি জাহাজে করে জনি ট্রেডার্স এর ঝুট পণ্য নিয়ে বন্দর ছেড়ে ভারতের ধুবরির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
কাস্টমস এর ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জামান আহমেদ জানান, ভারত থেকে নৌপথে চিলমারী নৌবন্দরে পণ্য পরিবহণ খরচ তুলনামূলক কম। এতোদিন ভারত থেকে চিলমারী বন্দরে পাথর আসলেও এই প্রথম চিলমারী নৌবন্দর থেকে বাংলাদেশি জাহাজ পণ্য নিয়ে ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করছে। প্রথম দিন ২৭ টন ওয়েস্ট কটন নিয়ে লিজেন্ড কনসোটিয়াম লি. এর শান আবিদ-১ নামের জাহাজটি চিলমারী নৌ বন্দর থেকে ভারতের ধুরবির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
এই সিএন্ডএফ এজেন্ট বলেন, ‘ ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষি হতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এ নৌবন্দর। শেরপুর তুলার মিলের ঝুট পণ্য নিয়ে জনি ট্রেডার্স নামক রপ্তানীকারী প্রতিষ্ঠান জাহাজ যোগে এই ২৭ টন ওয়েস্ট কটন রপ্তানি করছে।
তবে সকাল ১১ টায় শান আবিদ-১ নামের এই জাহাজটি বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কাস্টমস জটিলতায় তা ছাড়তে বিলম্ব হয়।
আমদানি রফতানী কারক শিপিং এজেন্ট নাসির উদ্দিন খান বলেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে চিলমারী বন্দর হয়ে আমদানী শুরু হয়েছে। ইতোপূর্বে বেশ কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভূটানের পাথর ধুবরি থেকে এই বন্দর দিয়ে আমদানী করছে। এতে প্রায় ৪০টির বেশী জাহাজ ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো আমরা রপ্তানি করতে যাচ্ছি। জনি ট্রেডার্সের ২৭ টন ওয়েস্ট কটন নিয়ে বন্দরের ক্লিয়ারেন্সের অপেক্ষায় ১৫ দিন থেকে শান আবিদ-১ নামের জাহাজটি নোঙর করে অপেক্ষায় ছিল। আজ বন্দরের ক্লিয়ারেন্স পেয়ে ভারতের ধুবরির উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে গেল। আমদানী রফতানী কারণ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন জাহাজ নাই। একটি করে জাহাজ মাসে দুই লক্ষ টাকা চুক্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলো ভাড়া আনে। কিন্তু তাদের সকল ধরনের বৈধ কাগজপত্র থাকার পরেও বন্দর থেকে অনুমতি না মেলায় লোকশান গুণতে হয়। এতে অনেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মুখ ফিরিয়ে নেন।
রফতানির জন্য জাহাজে বোঝাই হচ্ছে জুট পণ্য
জনি ট্রেডার্সের ম্যানেজার শাহীন আলম বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৫দিন থেকে পণ্য নিয়ে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের অপেক্ষায় বন্দরে অপেক্ষায় ছিলাম। আমাদের রপ্তানিকৃত পণ্য ভারতের আমদানিকৃত প্রতিষ্ঠান মহাবীর ট্রেডার্স ক্রয় করেছে। এই পণ্য রপ্তানি করে ফেরার পথে আমরা ভারতের সুরেন্দ্র চৌধুরীর কাছ থেকে পাথর নিয়ে আসবো বলে কথা হয়েছে। এজন্য মালবোঝাই জাহাজের সাথে আমরা অন্য একটি খালি জাহাজও নিয়ে যাচ্ছি। দুইটি জাহাজে করে পাথর আসবে। যা চিলমারী বন্দর হয়ে জামালপুর যাবে।
কামিয়াব সাহেব নামের অন্য একটি ট্রেডার্সের নাবিক মোঃ শাহীন আলম বলেন, দুই মাস থেকে বন্দরে জাহাজ নোঙর করে বসে আছি। এপাশ থেকে কোন পণ্য রপ্তানির ভাড়া না পাওয়ায় জাহাজ ছেড়ে দিচ্ছি না। একমুখী ব্যবসায় মালিকের লাভ কম হয়। ধুবরি থেকে চিলমারী বন্দর পর্যন্ত জাহাজ আপডাউন করতে প্রায় ২৫০ লিটার তেল লাগে। নদীতে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ২০০ মে.টন পাথর আমদানী করতে পারলেও বর্তমানে পাথর আসবার অনুমতি মেলে মাত্র ১২০ মে.টন। নদী খনন হলে আমদানী রফতানী কারক প্রতিষ্ঠানের এই নদীপথে আগ্রহ বাড়বে।
কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের ডেপুটি কমিশনার রিয়াদুল ইসলাম জানান, ‘নৌ প্রটোকল রুট এনডবিউ -৩ পথে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ পণ্য নিয়ে চিলমারী নৌবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করে। রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধিসহ কুড়িগ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ বন্দর নতুন মাত্রা যোগ করবে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘এটা অবশ্যই ভালো খবর। সরকার চিলমারী নৌবন্দর চালুর যে উদ্যোগ নিয়েছে এটি তারই বাস্তব প্রতিফলন। আশা করছি নৌপথে পণ্য পরিবহণে চিলমারী নৌবন্দর আবারও তার পুরনো ঐতিহ্যে ফিরে আসবে।’