সোহেল রানা , গুরুদাসপুর (নাটোর)- প্রতিনিধি
সহায় সম্বল বলতে নিজেদের কিছুই নেই। ভিক্ষা করে যা মিলে দিন শেষে সেই আয়ে কোন মতে পেট চালান। রাত এলেই অন্যের জায়গায় পাতা ঝুপড়িতে আশ্রয় নিতে হয়। সেখানে যতটুকু ঘুমান, ভাবনার জায়গাজুড়ে ততটুকুই উচ্ছেদের দুশ্চিন্তা। রোজিনাদের হৃদয়ে বাসা বাধা এই দুশ্চিন্তা এক দিনের নয়! প্রায় দশ বছর ধরে এই অনিশ্চয়তা তাদের জীবনের বড় অংশজুড়ে ঠাঁই করে নিয়েছে। তবে এখন আর রোজিনাদের দুশ্চিন্তার পারদ গিলতে হবে না। ভূমিহীন প্রতিবন্ধি রোজিনা প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়েছেন। পেয়েছেন মাথা গোঁজার নিরাপদ আবস্থল। এবারের ঈদ নিজেদের ঘরে করতে পারবেন তিনি। প্রতিবন্ধি রোজিনার বাড়ি মশিন্দা ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামে। স্বামী ও দুই মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। বড় মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে শিশু শ্রেণিতে লেখা-পড়া করছে। রোজিনা বেগম জানালেন, জন্ম থেকেই তিনি প্রতিবন্ধি। নিজের জমি জিরাত না থাকায় প্রতিবেশির পতিত জমিতে বাঁশের ঝুপড়ি বানিয়ে সেখানেই স্বামী সন্তান নিয়ে ঠাসাঠাসি করে বাস করতেন। সাধ্যমত শ্রম বিক্রি করেন। হাতে কাজ না থাকলে অন্যের দ্বারে হাত পাততে হয়। এভাবে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন কাটলেও থাকার জায়গা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। শঙ্কা দেখা দেয় উচ্ছেদের। উচ্ছাসিত কন্ঠে রোজিনা বলেন- তারা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরে উঠতে যাচ্ছেন। এখন আর তাদের উচ্ছেদের ভায় নেই। রোজিনার মতো আছমা, তানিয়া, কোকেয়ার মতো অসহায় দুস্থ ভিক্ষুক, প্রতিবন্ধী, দিনমজুর, রিকশাচালক, তালাকপ্রাপ্ত, বিধাবা নারী ও গৃহপরিচারিকাসহ চার ধাপে মোট ৫০৬টি ভূমিহীন পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন।
গতকাল বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ১০০ টি পরিবারের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরের চাবি এবং জমির দলিল তুলে দেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস। এর মাধ্যমে গতকাল থেকে গৃহহীন এবং ভূমিহীন মুক্ত গুরুদাসপুর ঘোষণা করা হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থায়নে ভূমিহীন প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ঘরে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যায় হয়েছে। এই প্যাকেজে রয়েছে প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারের জন্য ২ শতাংশ জমি এবং সেমি পাকা বাড়ি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রাবণী রায় জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে অস্বচ্ছল পরিবারগুলো উন্নত আবাসনের আওতায় এসেছে। দৃষ্টিনন্দন এসব পাকাঘর পেয়ে দরিদ্র উপকারভোগীরা এখন থেকে নিজেদের ঘরে বাস করতে পারবেন। এসব পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে পর্যায়ক্রমে আয়বর্ধক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।