সোমবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
সোমবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

গাজা যুদ্ধের জেরে প্যালেস্টাইন কোলার কিস্তিমাত, পিছিয়ে পড়ছে কোকাকোলা-পেপসি

‘সাফাদ ফুড’-এর প্রস্তুতকৃত প্যালেস্টাইন কোলা

বিশ্ব ডেস্ক: গত বছরের ৭ অক্টোবর হতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলের আগ্রাসী যুদ্ধের জেরে কোমল পানীয়ের বাজারে কিস্তিমাত করেছে সদ্য বাজারে আসা প্যালেস্টাইন কোলা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিশ্বখ্যাত কোমল পানীয় কোকাকোলা ও পেপসির সঙ্গে ইসরায়েলি মালিকানার সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাদের বিকল্প হিসেবে নতুন পানীয়টি দুই মাসের মধ্যে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে স্কটল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, প্যালেস্টাইন কোলার চাহিদা এখন ক্রমবর্ধমান। বর্তমানে ইউরোপেও অসংখ্য রেস্তোরাঁ গাজা সংঘাতের কারণে মার্কিন মালিকানাধীন পণ্য এড়িয়ে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে অন্তত ৪০ লাখ ক্যান প্যালেস্টাইন কোলা বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

জানা যায়, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর মাত্র ছয় মাস আগে পেপসি ও কোকাকোলার বিকল্প হিসেবে প্যালেস্টাইন কোলা বাজারে আনার পরিকল্পনা করেন সুইডেনের মালমোতে বসবাস করা তিন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত সুইডিশ ভাই—হোসেইন, মোহাম্মেদ এবং আহমাদ হাসোন। তাঁরা তিনজনই সফল ব্যবসায়ী।

এরই অংশ হিসেবে তাঁরা গড়ে তোলেন ‘সাফাদ ফুড’ নামের এক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটিই এখন বিশ্বজুড়ে প্যালেস্টাইন কোলা সরবরাহ করছে।

‘সাফাদ ফুড’ -এর যোগাযোগ পরিচালক মোহম্মদ কিসওয়ানি বলেন, পানীয় তৈরির মূল উদ্যোক্তা হাসোন পরিবারের বড় ভাই হোসেন। তিনি বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং দোকানে প্রধান ব্র্যান্ড পেপসি এবং কোকাকোলার বিকল্প না থাকার বিষয়টি লক্ষ করেছিলেন।

এ ছাড়াও, সাম্প্রতিক গাজা সংকটের কারণে সুইডেন এবং ইউরোপের অনেক রেস্তোরাঁই এই পানীয়গুলো বিক্রি না করার উপায় খুঁজছিল। কারণ এই পণ্যগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলি যোগসূত্রিতা রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরবি ভাষায় হোসেইন হাসোন এ বিষয়ে বলেন, তাঁরা গাজার শিশুদের ওপর বিশেষ মনোযোগ রেখে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই উদ্যোগের সঙ্গে একটি দাতব্য সংস্থা জড়িত। দুজন নিবেদিতপ্রাণ আইনজীবীর দ্বারা এই সংস্থাটি পরিচালিত হয়। সংস্থাটির লক্ষ্য হলো—ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষের কাছে, বিশেষ করে গাজার বাসিন্দাদের কাছে সরাসরি তহবিল সরবরাহ করা।

এ ছাড়াও যে কোম্পানির অধীনে প্যালেস্টাইন কোলা তৈরি হচ্ছে সেই সাফাদ ফুডের নামে সুইডেনে সাফাদ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনাও করেছে হাসোন পরিবার। এই কোম্পানির মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ ফিলিস্তিনের বিভিন্ন প্রকল্পে দান করা হবে।

এ দিকে, নতুন ব্র্যান্ড হিসেবে কোমল পানীয়ের প্যালেস্টাইন কোলার আগমনের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। এর ফলে পৃথিবীজুড়ে অসংখ্য কোম্পানি এই পানীয়টি মজুদ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

প্যালেস্টাইন কোলার ক্যানের নকশাটিও ইতিমধ্যে বেশ নজর কেড়েছে। পানীয়টির ক্যানগুলোর গায়ে বর্তমানে ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক প্রতীক জলপাইয়ের ডাল এবং কেফিয়াহর নকশা শোভা পাচ্ছে। আর ‘সবার জন্য স্বাধীনতা’—এমন একটি বার্তাও লেখা আছে ক্যানগুলোতে।

প্রসঙ্গত, ‘সাফাদ ফুড’-এর নামকরণ করা হয়েছে বর্তমানে ইসরায়েলের অন্তর্ভুক্ত টাইবেরিয়াস হ্রদের উত্তরে অবস্থিত একটি শহরের নামানুসারে। সেখান থেকেই হাসোন ভাইদের পূর্বপুরুষেরা ১৯৪৮ সালে লেবাননে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে লেবানন থেকে বহিষ্কার করা হলে তাঁরা সুইডেনে গিয়ে স্থায়ী হন। এরই সুবাদে প্যালেস্টাইন কোলার প্রতিষ্ঠাতা তিন ভাইয়েরই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সুইডেনে।

প্রায় ২৫ বছর আগে গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রির ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে তাঁরা দারুণ সফলতা পেয়েছিলেন। এক সময় তাঁরা রিয়েল-এস্টেট ব্যবসায়ও মনোযোগ দেন এবং অর্জন করেন সাফল্য।

পাশাপাশি, পানীয় ব্যবসায় ওই তিন ভাই প্রথম পণ্য হিসেবে প্যালেস্টাইন কোলা তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন। কারণ তাঁরা এমন কিছু উৎপাদন শুরু করতে চেয়েছিলেন, যা দিয়ে প্রচুর লভ্যাংশ অর্জন করা সম্ভব। এরই অংশ হিসেবে তাঁরা এই সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেন।

অপর দিকে, দ্য ন্যাশনাল আরও বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর বিশ্বজুড়ে পানীয়র বেশ কিছু ছোট ছোট ব্র্যান্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে লেবাননে জাল্লৌল এবং জি কোলা স্থানীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মিশরেও স্পিরো স্পাথিস নামে একটি পানীয়র বিক্রি ৩৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এ ছাড়াও, বাংলাদেশে আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি তাদের পানীয় মোজো কোলার বিক্রির একটি অংশ ফিলিস্তিনের তহবিলে দান করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় বর্তমানে তাদের পণ্য ‘মোজো’ কোলার বিক্রি ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

উবস/আরএ

সম্পর্কিত