জুন ৯, ২০২৩ ১১:৩৫ বিকাল



কুড়িগ্রামের সংকটে পুলিশ কার্যক্রমে মানবিকতা ও পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলামের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

 

স্টাফ রিপোর্টার -(০৫-০৪-২০২০ইং) কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে করোনা ভাইরাসের কারনে নিম্ন আয়ের মানুষদের খাদ্য সংকট মোকাবেলায় ও জনসচেতনতায় এগিয়ে এসেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান ( বিপিএম)’র নেতৃত্বে জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম। অদ্য ০৫-০৪-২০২০ইং রবিবার দুপুড়ে নাগেশ্বরীর সদর বাজার সহ বিভিন্ন বাজারের নৈশপ্রহরী দের মাঝে খাবার সামগ্রী চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরন করেছে পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম।

নাাগেশ্বরী এলাকার নৈশপ্রহরী দের একসপ্তাহের খাদ্যসামগ্রী বিতরন –

নাগেশ্বরী থানা অফিসার ইনচার্জ রওশন কবীরের উদ্যোগে থানা চত্বরে নৈশ প্রহরীদের খাদ্যসামগ্রী নিতরন করা হয়। এরপর তিনি নাগেশ্বরী এলাকার বাজারগুলো পরিদর্শনে গিয়ে ভীড় জমায়েত বন্ধে ঔষধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সীমিত সংখ্যক দোকান ছারা বাকি দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন।

পুলিশ সুপার সহ পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেদের অর্থায়নে গত এক সপ্তাহ ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গরিব ও দুস্থ্য মানুষদের বাড়িতে বাড়িতে খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছেন জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম।

০৩/০৪/২০২০ইং শুক্রবার সুপার জানতে পারেন চিলমারীর দুর্গম চরে খাদ্য সংকটে রয়েছেন ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ। পুলিশ সুপার চিলমারী থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করলে ওসি আমিনুল ইসলাম চর শাখাহাতি নতুন আবাসন কেন্দ্রে তিন বৎসর যাবত অসুস্থ বৃদ্ধ ফুলমিয়ার (৬০) পরিবারে এক সপ্তাহের খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেন।

চিলমারী এলাকার ফুলমিয়ার বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী

এর একদিন আগে ২রা এপ্রিল পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলামের অর্থায়নে জোড়গাছে নিহত নৈশপ্রহরী এরশাদুলের পরিবারে ১০ দিনের খাদ্যসামগ্রী পৌছানো হয় বলে জানা গেছে।

০২-০৪-২০২০ইং উলিপুর হাতিয়ায় অসুস্থ বৃদ্ধা সন্তানহীন কাচুয়ানী বেগম (৮২) কে নিয়ে জাতীয় গনমাধ্যমসহ স্থানীয় অনলাইন মিডিয়ায় বৃদ্ধার মানবেতর জীবন যাপন বিষয়ে নিউজ প্রকাশিত হয়। পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় উলিপুর থানা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে তড়িৎ খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ঐ বৃদ্ধার কাছে দিয়ে আসেন।

উলিপুর কাচুয়ানী বেগম (৮২) হাতিয়ায় অসুস্থ বৃদ্ধার খাবার

কুড়িগ্রাম সদর থানা সহ জেলার ১১ টি পুলিশ থানাকে মানবিক সহায়তায় কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম। কুড়িগ্রাম সদর থানা অফিসার ইনচার্জ প্রতিবেদককে জানান,মাননীয় পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম মহোদয় এর তথ্যমতে ০৩-০৪-২০২০ইং শুক্রবার ভোকেশনাল মোড়ের ভিতরে মজিবর (৫২)ও তার পরিবারের সদস্য সাতজন সহ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। স্যারের নির্দেশনায় ও অনুপ্রেরনায় পরিবারটির পাশে দারিয়েছি। তিনি বলেন, স্যারকে আমরা প্রতিনিয়ত এরকম অনেক মানবিক সহযোগিতায় অসহায় মানুষদের পাশে দেখেছি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সরকারের নির্দেশনায় সকল কার্যক্রম সফলতার সাথে পালন করে আসছে। দেশের সংকটে পুলিশ বাহিনী কেন্দ্রীয়ভাবে মার্চ মাসের বেতন থেকে তহবিল গঠন করে মানবিক সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে অর্থ জমা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এতদ্বব্যতিত জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম জেলার অসহায় মানুষদের খাদ্যসংকট মোকাবেলায় নিজেদের মধ্যে তহবিল সংগ্রহ ও তা দিয়ে চলতি খাদ্যসংকট মোকাবেলায় কাজ করবে ।

জেলার পুলিশী কার্ষক্রম নিয়ে পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান করোনা সচেতনতায় জেলার ৯ টি উপজেলার ১১ টি পুলিশ থানা থেকে ২০০ জন সেচ্ছাসেবী ও মফস্বল পর্যায়ের গনমাধ্যকর্মী এবং আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদেরকে মানবিক কার্যক্রমে উৎসাহিত করেছেন। ২২ শে মার্চ ২০২০ ইং জেলার গনমাধ্যকর্মী, ইলেকট্টনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া কর্মীদের সাথে এসপি কনফারেন্স রুমে মিট দা প্রেস সম্পন্ন করেন।এসপি মহিবুল ইসলাম খান নিজে মাঠে থেকে জেলা সদর সহ প্রতিটি থানায় পুলিশ সদস্যদের পাশে থেকে রাতদিন নিরলস পরিশ্রম করে শিক্ষা সচেতনতা ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পরা বিশাল জনগোষ্ঠীর জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ, প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা জেলা পুলিশ কুড়িগ্রামের জন্য চ্যালেন্জ, যা তিনি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছেন।

যাতায়াত ও ব্যবসাবাণিজ্য সীমিতকরন, গুজব ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন,পরবর্তীতে মার্কেট বিপনি বিতান ও জনগনের জমায়েত ভীড় বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহন, পুলিশ টহল ও রুটিন ওয়ার্ক ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ধরলা সহ ১৬ টি নদনদীর অববাহিকায় অবস্থিত ১১ টি থানা পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে জেলার ৭২ টি ইউনিয়ন এবং বসবাসরত জনগোষ্ঠীর সেবাদান কার্যক্রম নিশ্চিত করা একজন সৎ, দক্ষ,চৌকস, মানবিক ও সহনশীল গুণসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। যা তিনি পুলিশ সুপার হিসেবে গোটা জেলার জন্য এক নতুন অজানা সংকটময় পরিস্থিতিতে জেলা পুলিশের ১১০০ জন পুলিশ সদস্যকে সাথে নিয়ে পুলিশী কার্যক্রমের নেতৃত্ব দিয়ে এ পর্যন্ত একটা সম্মানজনক আস্থার জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছেন। কুড়িগ্রাম জেলাবাসী বর্তমান পুলিশী কার্যক্রমে ও জবাবাদিহিতার প্রশ্নে সন্তষ্ট এমন মন্তব্য অনেকের কাছে পাওয়া গেছে।

একজন পুলিশ সুপারের মানবিক কার্যক্রম ও পুলিশের ভালো ইমেজ তৈরিতে নেয়া পদক্ষেপ ইতিবাচক প্রমানিত হওয়ায় গোটা জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষিত সচেতন তরুন যুবকরা দেশের এই চরম সংকটে সারা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়া এসকল যুবকরা। কোনপ্রকার পুর্বপ্রস্তুতি ও পুর্ব যোগাযোগ ছারাই পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম পেজে ২৪ ঘন্টার নোটিশে ও করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবেলায় স্বেচ্ছাশ্রম দেয়ার আহবানে সারা দিয়ে গত ২৯-০৩-২০২০ইং সকাল ১১ টায় প্রায় ২০০ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি ও কর্মীরা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলো। করোনা ভাইরাস সংক্রমন মোকাবেলায় পুলিশ কে সহযোগিতার পাশাপাশি সচেতনতামুলক কার্যক্রমে অংশগ্রহন করার বিষয়টিকে সমাজের সচেতন মহল পজিটিভ ভাবেই দেখছেন।

সেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলো এগিয়ে এসেছে

অ্যাডঃ আনিছ বলেন, পুলিশকে নিয়ে তরুন ও যুবকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, পুলিশের কার্যক্রমে তারা মানবিকতা অনুভব করতে পেরেছে ফলে তারা পুলিশ সুপারের কথায় উৎসাহ পেয়ে এগিয়ে এসেছে।এ ঘটনাকেও জেলা পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলামের সফলতা বলে অনেকে দাবী করেছেন।

কুড়িগ্রাম সদর নাজিরার স্থায়ী বাসিন্দা প্রভাষক যোবায়ের হোসেন বাপুন বলেন,

কুড়িগ্রামে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা বিষয়ে সচেতনতামুলক কার্যক্রম ছারাও কার্যত এ ভাইরাস মোকাবেলায় করনীয় শীর্ষক কি  কার্যক্রম যেমন পুলিশ সুপার কার্যালয়, পুলিশ লাইন, থানা এ জায়গাগুলোতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, নিয়মাবলী লেখা কালার ব্যানার লাগানো, পুরো শহরে ও আবাসিক এলাকায় জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানো কাজগুলো পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে জেলাবাসী প্রথম দেখতে পায়। তিনি বলেন, এটা অস্মীকার করার উপায় নাই যে, আমরা কুড়িগ্রাম বাসী প্রাকটিক্যাল অনেক বিষয় দেখে অনুপ্রানিত হই। পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম কুড়িগ্রামের মানুষকে ভালোবেসে  ফেলেছেন ফলে জেলাবাসীকেও তিনি অল্পদিনে চিনেছেন, সরলতা বুঝেছেন।

জেলার বাইরে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনের টহল নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। চিলমারী সদরে পুলিশ সুপারের ছবি সহ সচেতনতা সৃষ্টিতে নিয়মাবলী ও ঘরে থাকুন লেখা কালার ব্যানার শোভা পাচ্ছে। উলিপুর সদর সহ ধামশ্রেনী, হাতিয়া, থেতরাই ইউনিয়নসহ প্রান্তুিক জনগোষ্ঠী দের মাঝে এসকল ব্যানার নিয়ে ভলান্টিয়ারদের সচেতনতামুলক  কাজ করতে দেখা গেছে। তারা মানুষকে সাবান, মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরন ও  ব্যবহার করার নিয়ম দেখিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে মসজিদ ভিত্তিক ঈমাম মুয়াজ্জিন দের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে করোনা ভাইরাস মোকাবেলা নিয়ে তাদের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস চালাতে দেখা গেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে ১ লা মার্চ থেকে ৩ রা এপ্রিল পর্যন্ত হোম কোয়ারেন্টাইনে মোট ৩৩৭ জন, এর মধ্যে ৩৩৫ জনের মেয়াদ পুর্ন হয়েছে বাকি ২ জন নজরদারী তে আছে।

সর্বশেষ পরিস্থিতি সন্তোষজনক হলেও শম্কা কাটিয়ে উঠতে সরকারি ঘোষনা অনুযায়ী সকলকে নিশ্চিত ঘরে থাকতে হবে।  কুড়িগ্রাম জেলা বার সমিতির সাবেক সাঃসম্পাদক অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন বলেন, কুড়িগ্রাম জেলা করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় পুলিশ প্রশাসনের সকল কার্যক্রম প্রশংসনীয়, ফ্রন্ট লাইনে কাজ করেছে পুলিশ।  পাশাপাশি জেলা প্রশাসন সহ অন্য সংস্থা এবং সংগঠনগুলো  কাজ করছে।পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জেলা পুলিশি কার্যক্রমে উনার বেশকিছু পদক্ষেপ পুলিশের ভাবমুর্তি কে উজ্জল করেছে।

পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম বলেন, জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রথম থেকে সর্ব্বোচ্য পেশাদারীত্ব নিয়ে জেলাবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলা কুড়িগ্রাম বাসীর জন্য আশীর্বাদ হতে পারে। তারপরও লোকজন বের হতে চেষ্ঠা করে, আমরা তাদের বুঝিয়ে আবার প্রয়োজনে কঠোর হয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছি। নিজেদের সাধ্যমত মানবিক সহযোগিতা  অসহায় দুঃস্থ গরীবদের জন্য জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম অব্যাহত রাখবে। তিনি মানবিক কাজে পুলিশের সহযোগিতায়  বিত্তবান সহ ইচ্ছুক সকলকে  এগিয়ে আসার আহবান জানান।



Comments are closed.

      আরও নিউজ