শনিবার, ১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি
শনিবার, ১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

এমপি পুত্রের চেয়ে ভাইয়ের সম্পদ ৭ গুণ বেশি

আব্দুল লতিফ সরকার,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ২১ মে অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের এমপি ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ ও তার সহোদর ছোট ভাই সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদের মধ্যেই। অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হচ্ছেন তারিকুল ইসলাম ওরফে তুষার।

এ নির্বাচন উপলক্ষে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও লালমনিরহাট-২ (আদিতমারী-কালীগঞ্জ) আসনের এমপি নুরুজ্জামান আহমেদের পুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদের চেয়ে এমপির ছোট ভাই সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুজ্জামান আহমেদের বার্ষিক আয় ৭ দশমিক ৭০ গুণ বেশি।

রাকিবুজ্জামান আহমেদের পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ব্যবসা। বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৪০০ টাকা।

এখানে উল্লেখ, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাস করে কালীগঞ্জের কেইউপি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি ওই বেসরকারি কলেজটি সরকারিকরণ হলে তিনি শিক্ষকতার পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

মাহবুবুজ্জামান আহমেদও পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। তিনি বিভিন্ন খাত মিলিয়ে সর্বমোট বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৮৭ লাখ ৫৭ হাজার ৬০২ টাকা।

মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বিকম পাস। তিনি লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি দুবারের নির্বাচিত কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তিনি এর আগে ২০ বছরের অধিক সময় কালীগঞ্জের তুষভাণ্ডার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে দাখিল করা হলফনামায় মাহবুবুজ্জামান আহমেদের অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকার পরিমাণ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত সর্বমোট অর্থের পরিমাণ তিন কোটি ৬১ লাখ ৫১ হাজার ২৭৫ টাকা, সরকারি বন্ড ক্রয় এক লাখ টাকা, অর্জনকালীন সময়ের স্বর্ণের মূল্য ১০ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিকসামগ্রী ৫০ হাজার টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য ৬৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাতে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ৬৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৭৫ টাকা দেখানো হয়েছে।

অপর দিকে এমপিপুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত সর্বমোট অর্থের পরিমাণ ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা, ইলেকট্রনিকসামগ্রীর অর্জনকালীন মূল্য দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪২ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা দেখানো হয়েছে।

এ হিসেবে এমপি নুরুজ্জামান আহমেদের সহোদর ছোট ভাই মাহবুজ্জামান আহমেদের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ এমপিপুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদের চেয়ে আট দশমিক ৬৭ গুণ বেশি।

হলফনামায় মাহবুবুজ্জামান আহমেদ তার স্থাবর সম্পদের মূল্য হিসাবে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৪০৯ টাকা উল্লেখ করেছেন। মাহবুবুজ্জামান আহমেদ তার দায় দেনার পরিমাণ পাঁচ কোটি ৪৬ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০ টাকা উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু এমপিপুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ তার হলফনামায় স্থাবর সম্পদ হিসেবে পাঁচ বিঘা জমি ও জলাশয় ১৫ একরের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে এই জমির কোনো মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।

এ দিকে এমপিপুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ তার হলফনামায় তথ্য গোপন করার অভিযোগ করেন এমপি নুরুজ্জামান আহমেদের সহোদর ছোট ভাই মাহবুজ্জামান আহমেদ।

এ উপলক্ষে লালমনিরহাট শহরের ভোকেশনাল মোড়সহ একটি অভিযাত রেস্তোরাঁয় আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে গত ২৩ এপ্রিল বিকেলে মাহবুবুজ্জামান আহমেদ লিখিতভাবে অভিযোগ করে বলেন, এমপিপুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদের মোট জমির পরিমাণ (দলিল অনুসারে) ৪২ দশমিক ২৩ একর। এর মধ্যে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৬৫ একর জমির কথা। অবশিষ্ট ২৫ দশমিক ৫৮ একর জমির তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। যার মূল্য এক কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, রাকিবুজ্জামান আহমেদ বিগত এক বছরে কলেজ শিক্ষক হিসেবে যে তিন লাখ ৩৪ হাজার ৩২৪ টাকা বেতন হিসেবে গ্রহণ করেছেন, সেই তথ্যও হলফনামায় উল্লেখ করেননি।

মাহবুবুজ্জামান আহমেদ বলেন, এ-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত রাকিবুজ্জামান আহমেদ তার হলফনামায় উল্লেখ না করে গোপন করেছেন, এ হিসেবে তার প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছি, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ করেছি। উচ্চ আদালতেও অভিযোগ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

তবে এমপিপুত্র রাকিবুজ্জামান আহমেদ বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা উভয়পক্ষের আইনজীবীগণের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আমার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন।

সম্পর্কিত