শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

উলিপুরে চাতালে আদার চাষ,তবু বছরের পর বছর চাল সংগ্রহ

নিউজ ডেস্ক: চাতালে আদার চাষ তবু সচল মেসার্স মজুমদার চালকল। বন্ধ চালকলটি ছয় বছর ধরে কাগজে কলমে সচল রেখেছেন উলিপুর খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ। এমন ৪৫টি অচল চালকল সচল দেখিয়ে বছরের পর বছর সেখান থেকে চাল সংগ্রহ করছেন। খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে এমন কারসাজি করে আসছে একটি মিলার চক্র। বিভিন্ন প্রকল্পের চাল কালোবাজার থেকে ক্রয় করছেন তারা।
উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যে জানা যায়, গত বোরো মৌসুমে আভ্যন্তরিন খাদ্য সংগ্রহ অভিযান/২০২৩ ১৯০৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। ২০ মে/২৩ চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে এবং ৩০ আগষ্ট শেষ হয়। চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রা ১৯০৭ মেট্রিক টন চাল চুক্তিবদ্ধ ৪৭ টি চাল কল থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ্যানি চালকল থেকে ৩১.১৭০ টন। মেসার্স সরদার চালকল থেকে ৩৪.৮৬০ মেট্রিক টন। মেসার্স বিলকিচ চালকল থেকে ২৯.৫২০ মেট্রিক টন চালসহ এ সব বন্ধ চালকল থেকে নির্ধারিত বরাদ্ধ সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ ৬ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে এ সব চালকল।

সরেজমিনে গিয়ে মেসার্স এ্যানি চালকল ও সরদার চালকল বন্ধ পাওয়া গেছে। চাল উৎপাদনের যন্ত্রপাতী পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হযরত আলী ও নজরুল ইসলাম জানান,গত কয়েক বছর ধরে চালকল দুটি বন্ধ। মজুমদার চালকলের চাতালে আদার চাষ করা হয়েছে। হাউজ,বয়লার সহ যন্ত্রপাতী পরিত্যক্ত পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে ধান ভাঙ্গা মিল কোন রকমে চালু আছে খুচরা ধান ভাঙ্গা হয়। মিলের ড্রাইভার শহীদুল ইসলাম বলেন,চাতাল চলে না। তাই চাতাল ভেঙ্গে আদা লাগানো হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে,মেসার্স কাশেম চালকলসহ তিনটি চালকল সচল পাওয়া গেলেও বজরা ইউনিয়নের মেসার্স এল আর চালকল,মেসার্স সততা চালকলসহ বাকী সব চালকল বন্ধ ও পরিত্যক্ত দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, মিলারদের একটি চক্র বিভিন্ন সরকারী প্রকল্প ও ডিলারদের কাছ থেকে কালোবাজারে চাল ক্রয় করে খাদ্যগুদামে বিক্রি করছে। এর সাথে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ জড়িত।

মেসার্স মজুমদার চালকলের মালিক রতন কুমার মজুমদার বলেন,চাতালের ব্যবসা নাই,পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে তাই ইট তুলে আদার চাষ করেছি। তাহলে সরকারী গুদামে চাল দিচ্ছেন কিভাবে,তার ভাষ্য আমি দিচ্ছি না। চাল দিচ্ছে মিল মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম রাজা। দেড় লাখ টাকা নিয়ে ১০বছরের জন্য চাতাল তাকে দিয়েছি। সে কিভাবে সচল দেখাচ্ছে সেটা তিনি জানেন। তিনি একাই প্রায় ২০টি চালকলের বরাদ্ধকৃত চাল দিচ্ছেন। গত কয়েক দিন আগে জেলা থেকে তার চাতাল পরিদর্শন করেছেন বলে জানান তিনি। ।

উপজেলা চালকল মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও তবকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজাউল করিম রাজা বলেন, ২০টা নয় শুভেদ্রা চালকল ও সিরাজুল চালকল সহ ৩টি চাল কলের বরাদ্ধের চাল আমি দেই। বাকী গুলো মালিকরা দেন। তবে অনেকে বরাদ্ধ বিক্রি করে দেন বলে স্বীকার করেন। সিন্ডিকেট নয় আমরা মিল মালিক সমিতি চাল সংগ্রহ অভিযানকে সহযোগিতা করি। অনেকে সরকারী চাল কেনাকাটা করে। মিল চাতাল সব বন্ধ হলেওÍ সরকারী খাতায় সব সচল এটা কিভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে তার ভাষ্য,এবার খাদ্য কর্মকর্তাকে বলে দিয়েছি সরেজমিন দেখে কাজ করবেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ মিসবাহুল হোসাইন বলেন, বৈধ লাইন্সেসধারী, সঠিক অবকাঠামো,সচল ও সংগ্রহ কাজে বারিত(অক্ষম) নয় এবং নীতিমালা অনুযায়ী চাল সংগ্রহে সামর্থ আছে দেখে চুক্তি করা হয়। যারা বরাদ্ধ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হচ্ছে। সবার মিল চাতাল বন্ধ তালিকাভুক্ত হয় কিভাবে এ প্রশ্নে উত্তর এরিয়ে যান তিনি।

উপজেলা ধান চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি, ইউএনও মোঃ আতাউর রহমান বলেন,এ ধরনের কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুত্র, আজকের রুপান্তর

 

সম্পর্কিত