রবিবার, ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি
রবিবার, ২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি

আফগানিস্তান ইস্যুতে কী করবেন ট্রাম্প?

মূল: আজিজ আমিন  ভাষান্তর: রুশাইদ আহমেদ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আফগানিস্তান নিয়ে তার প্রশাসন কোন নীতিমালা গ্রহণ করবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, তালেবান ইস্যুতে প্রথম মেয়াদের চেয়ে এবার কঠোর অবস্থানে যেতে পারেন ট্রাম্প। তবে আফগানিস্তান ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য এবং পূর্বের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদের বাস্তববাদী নীতির অনুসরণ করা থেকে পিছপা হয়ে নাটকীয় কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকবেন।

ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত থাকা বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষত কয়েক দশক ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতির বিষয়ে। এ কারণেই, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে দোহা চুক্তির মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মূল কারিগরে পরিণত হন তিনি। যা দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় তালেবানের প্রত্যাবর্তনকে ত্বরান্বিত করে।

মূলত দোহা চুক্তির মধ্য দিয়ে আফগানিস্তান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নতুন দিকে মোড় নেয়। নিজ প্রশাসনের দক্ষিণ এশিয়া নীতির অগ্রগতি এবং সামরিক উপদেষ্টাদের মধ্যে জবাবদিহিতার অভাব নিয়ে যখন তিনি হতাশ, তখন আমেরিকার দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধে ইতি টানার সক্ষমতা দেখিয়ে ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজতে শুরু করেন। এবং সকল গতানুগতিক কৌশল মুখ থুবড়ে পড়ার পর সংঘাত বন্ধে তিনি সরাসরি তালেবানের সঙ্গে চুক্তির পদক্ষেপ নেন।

ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন ভবিষ্যতে তালেবানকে উপকৃত করবে বলে মনে করছে খোদ সংগঠনটি। তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল কাহার বলখি নভেম্বরে ট্রাম্পের বিজয়ের পরপরই এক্সে লিখেছিলেন, “দুদেশের সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করতে ট্রাম্প প্রশাসন বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিবে বলে আফগান সরকার আশা করে।”

ভবিষ্যৎ সম্পর্কের প্রসঙ্গে তালেবানের এই আকাঙ্ক্ষা প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে গোষ্ঠীটির ইতিবাচক মিথস্ক্রিয়াকেই প্রতিফলিত করে। কেননা, তালেবানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সরাসরি সমঝোতার ফলে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় কাবুলের মসনদে গোষ্ঠীটির ফেরার পথ সুগম হয়েছে।

উপরন্তু, তালেবানের সঙ্গে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তুলনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশি বাস্তববাদী। এবং তিনি দেশটিতে কোনো সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের বিপরীতে তালেবানকে নিজের মতো কাজ করতে দেওয়ার পক্ষপাতী। তাই দোহা চুক্তির আওতায় তালেবান যদি তার অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে ট্রাম্প মার্কিন সহায়তা বন্ধ করার পাশাপাশি কঠোর শর্তারোপ করতে পারেন।

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রতি সপ্তাহে চার কোটি মার্কিন ডলার মানবিক সহায়তা দেশটির অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সহায়তা কমিয়ে দিলে বা বন্ধ করলে দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। যা দেশটির শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তার অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিবে।

সামগ্রিকভাবে ট্রাম্পের সর্বশেষ মেয়াদে বৈশ্বিক দৃষ্টি আফগানিস্তান থেকে দূরে সরে গেছে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনে চলমান সংঘাত শুরু হলে ওয়াশিংটনের বৈদেশিক নীতি সেদিকেই ঘুরে যায়। এমতাবস্থায় আফগানিস্তানের মতো সমাধান হয়ে যাওয়া ইস্যুর দিকে নজর দেওয়ার চেয়ে একজন ‘আমেরিকা সবার আগে’ নীতিতে বিশ্বাসী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর মেয়াদের বড় একটা অংশ মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের সংকট নিরসনে ব্যস্ত থাকতে হবে।

আজিজ আমিন, লেখক, বিশ্লেষক এবং অক্সফোর্ড গ্লোবাল থিঙ্কট্যাঙ্কের ফেলো

আল জাজিরা থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনুবাদ: রুশাইদ আহমেদ

সম্পর্কিত