রবিবার, ২২শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
রবিবার, ২২শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৬শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

আত্মরক্ষার দেয়াল যেন পশু-পাখির মরণফাঁদ

ডেস্ক রিপোর্টঃ আমরা প্রায়ই দেখে থাকি বাসা বাড়িতে বাউন্ডারি করার পরে সেটার ওপরে পেঁরেক মারা থাকে। প্রায় সব এলাকাতেই এরকম প্রচলন দেখা যায়। কিন্তু এতে আদৌও কোনো ফলাফল রয়েছে নাকি শুধু বাহানা মাত্র!? তা আমার মাথায় বোধগম্য হয় না। আমরা কখনো চিন্তা করি না এসব দেয়ালের ওপরে প্রায় সময়ই পশু-প্রাণী হাঁটা চলা করে থাকে। পশু পাখি তো আমাদের সমাজেরই একটা বিরাট অংশ। তাদেরকে অবহেলা করে কখনোই আমরা চলতে পারি না। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর প্রত্যেকটা প্রাণী ই মানুষের উপকারের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। এদের প্রতি অন্যায় অবিচার বা আঘাত করা কোনো মানব জাতির ওপরই কাম্য নয়। এদেরকে রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্ব। যেমন প্রাণিজগতকে পৃথক জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল কোরআনে বলেন, ‘পৃথিবীতে বিচরণশীল যত প্রাণী আছে আর যত পাখি দুই ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, তারা সবাই তোমাদের মতো একেক জাতি।’ (সুরা আনয়া’ম, আয়াত ৩৮)

সম্প্রতি নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা অঞ্চলে একটা দেয়ালের সাথে ঝুলে থাকতে দেখা যায় একটা মৃত কুকুর। কুকুরটির কাছাকাছি গিয়ে দেখতে পাই সেখানে দেয়ালের উপরে পেরেক মারা থাকায় লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে তার দু পা আটকে পড়ে। আর দেয়ালের ওপরে থাকা পেঁরেকই যেন তার জীবনের কাল হয়ে দাড়ায়। ধারণা করা যায়, ঝুলে থাকার দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত সে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। দেয়ালের চতুর্পাশ লক্ষ্য করলে বোঝা যায় আঁটকে থাকা দু’পা বাদে অন্য দু পা দিয়ে অস্থির হয়ে পড়ে জীবনের শেষ অব্দি পর্যন্ত। নির্বোধ বোবা প্রাণীটির কান্না আর ছটফটানিতে একপর্যায়ে দেহের চারপাশে রক্তের বড় একটা বৃত্ত আকার ধারণ করে। যে বৃত্ত দেখলে চোখে পানি ঝড়বে যেকারো। আমি যদি বলি এই দেয়ালে পেরেক মারা ব্যক্তি নিঃসন্দেহে একজন মার্ডার আসামী, তাহলে বোধদয় মোটেই ভুল হবে না। যদিও তার অসাবধানতায় ঘটনার আবির্ভাব হয়েছে। কেননা, প্রাণী কল্যাণ আইনের ধারা ৭ অনুসারে, আইনে উল্লিখিত কোনো কারণ ব্যতীত, মালিকবিহীন কোনো প্রাণী হত্যা বা অপসারণ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। কোনো ব্যক্তি মালিকবিহীন প্রাণী হত্যা করলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ (দশ) হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

হোক পশু কিংবা মানুষ এরকম মৃত্যু কখনোই কাম্য নয়৷ আমাদের প্রত্যেকরই খেয়াল করা উচিৎ আমরা বেঁচে থাকার পাশাপাশি যেন আমাদের আশেপাশে থাকা পশুপাখি গুলোও বেঁচে থাকতে পারে। ওরা আমাদেরই সমাজের অংশ। পৃথিবীতে প্রত্যেক প্রাণীরই বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।

/বদরুল ইসলাম জামিল

সম্পর্কিত