বিশ্বনাথ সরকার(স্টাফ রিপোর্টার):-সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রবক্তা ও প্রাণপুরুষ মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ জন্মতিথি, শুভ জন্মাষ্টমী। দ্বাপর যুগের শেষ দিকে এই মহাপূণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ সোমবার সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। জন্মাষ্টমী তিথিতে সকালে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ এবং বিকেলে দেশের বিভিন্ন মন্দির মেলাঙ্গন থেকে ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমীর মিছিল বের করা হবে। রাতে অনুষ্ঠিত হবে শ্রীকৃষ্ণপূজা।তবে আজ
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৮টায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ ও দুপুর ২টায় ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিল বের করা হবে, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও পুরোহিতরা বলেছেন, বিশুদ্ধ পঞ্জিকা ও তিথি অনুসারে ঢাকাসহ সারাদেশে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রাসহ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। রাতে অনুষ্ঠিত হবে কৃষ্ণপূজা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও ইসকনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান।
সনাতন ধর্মানুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয়গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদগীতার উদগাতা শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপর যুগের বিশৃঙ্খল ও অবক্ষয়িত মূল্যবোধের সময়ে পৃথিবীতে মানবপ্রেমের অমিত বাণী প্রচার ও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরমাত্মার সঙ্গে জীবাত্মার মিলনই সেই বাণীর মূল বিষয়। তাই তিনি ভক্ত ও বিশ্বাসীদের কাছে প্রেমাবতার।
ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় খ্রিষ্টপূর্ব ৯০০-১০০০ সালে সনাতম ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের অবির্ভাব ঘটে। তার জন্মের সময় এই বিশ্বব্রহ্মা- পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। তাই মানব জাতিকে রক্ষার জন্য ভগবানে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানব জাতির কাছে জীবন ধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন। শ্রীকৃষ্ণের বাণী সমগ্র বিশ্বকে আলোড়িত করছে হাজার হাজার বছর ধরে। শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা হলো- সংঘর্ষ ও অন্যায়কে পরাভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই পবিত্র দিনে সকল অকল্যাণ ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে অন্তর আত্মাকে জাগ্রত করার শপথ নিতে হবে।
জন্মাষ্টমী মিছিল পূর্বক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। মিছিলের উদ্বোধন করবেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
এছাড়াও ৩০ আগস্ট দুপুর ২টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সভাপতিত্ব করবেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) এ উপলক্ষ্যে (২৫ থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত) তিন দিনব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ, ভজন কীর্তন, ভোগ আরতি, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় নাটক কীর্তন মেলা।