শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

আক্কেলপুরে ফ্রি সেহরি ও ইফতার খাওয়াচ্ছে রফিকুল হোটেল

স্টাফ রিপোর্টার,মোঃ গোলাম মোরশেদঃ জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে হোটেলের ভেতরে ঢুকে দেখা গেল সব চেয়ারে বসে খাবার খাচ্ছে লোকজন। এদিকে খাবার পরিবেশনকারীরাও মহাব্যস্ত। খালি নেই কারও হাত। কেউ এসে দিচ্ছেন ভাত, কেউ দিচ্ছেন তরকারি। হোটেলজুড়ে জমজমাটভাবে চলছে সাহরিপর্ব।
বুধবার  (২০ মার্চ) দিবাগত রাত ৩টায় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের কলেজ বাজারের কাঁচা মালপট্টিতে ‘রফিক হোটেল’-এ গেলে এমন চিত্র চোখে পড়ে।

হোটেলটি তেমন একটা বড় নয়। মালিকও তেমন অবস্থাশালী নয়। তবে জানা যায় বিস্ময়কর তথ্য। মালিক বছরের ১১ মাস হোটেলের খাবার বিক্রি করেন। এই আয় দিয়ে তিনি পুরো বছর সংসার চালান। পাশাপাশি রমজান মাসের জন্য টাকা জমা রাখেন। ওই টাকা দিয়ে হোটেলে রোজাদারদের বিনামূল্যে সাহরি ও ইফতারি খাওয়ান। রমজানের প্রথম দিন থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ মানুষ সেখানে বিনামূল্যে সাহরি ও ইফতারি খান।
রফিকুল ইসলাম  বলেন, আমি আক্কেলপুর বাজারের এক ক্ষুদ্র হোটেল ব্যবসায়ী। এই রমজান মাসে খাবারের হোটেলগুলো বন্ধ থাকে। এতে ইফতারি ও সাহরির রোজাদারদের কষ্ট হয়। এ জন্য সারা বছর আমার ব্যবসার থেকে কিছু টাকা পুঁজি জমা রেখে এক কাজটা করি। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৯ বছর ধরে হোটেলে ইফতারি ও সাহরি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমি যত দিন বাঁচব যেন এটা চালু রাখতে পারি।
স্থানীয়রা জানান, হোটেল মালিকের নাম রফিকুল ইসলাম রফিক। তিনি ভাড়া নিয়ে হোটেল ব্যবসা করেন। আক্কেলপুর পৌর শহরেই তার বাসা। ৯ বছর ধরে হোটেল ব্যবসায় তিনি রমজান মাসে বিনামূল্যে এ কাজ করে যাচ্ছেন। কলেজ হাটে আসা লোকজন, ব্যবসায়ীরা, হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনরা এই হোটেলে সাহরি ও ইফতারি খান।

সরেজমিনে ভেতরে ঢুক দেখা গেল রফিকুল নিজ হাতে ও তার হোটেলের কর্মচারীররা ইফতারি ও সাহরির খাবার পরিবেশন করছেন। তারা সাহরির আইটেমে ছিল গরুর মাংস, মাছ, শাকভাজা। এ সময় জানান, ইফতারিতে থাকে ছোলা বুট, বুন্দা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, শরবত। এসব খেয়ে রোজাদাররা তৃপ্ত হন। তারপর তারা দোয়া করেন।
আক্কেলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী মালেক বলেন, সাহরির সময় দেখি রফিক হোটেল খোলা আছে। অনেক মানুষ সাহরি খাচ্ছেন। আমিও টেবিলে বসলাম। খেয়ে ক্যাশে গিয়ে টাকা দিতে চাইলাম কিন্তু হোটেল মালিক টাকা নেননি। পরে জানলাম রফিক হোটেলে ৯ বছর আগে থেকে রোজাদারদের ফ্রিতে সাহরি ও ইফতারি খেতে দেওয়া হয়।
রফিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম তার হোটেলে ৯ বছর ধরে ফ্রিতে সাহরি ও ইফতারি খাওয়াচ্ছেন। এটি একটি মহৎ কাজ। রফিক ছোট ব্যবসায়ী হলেও তার মন অনেক বড়।
এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলার মেয়র মহাদয়, শহিদুল আলম উত্তরবঙ্গের সাংসদকে জানান, রফিকুল ইসলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হলেও সে প্রতি বছরই ১১ মাস ব্যবসা করে, এক মাস সেহরি ও ইফতার বিনামূল্যে সেবা প্রদান করে। অনেকেই সেখানে যায় এবং আমিও প্রতিবছরে একবার হলেও আমি সেখানে যাই। সে যদি আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য করে থাকেন তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। তবে এটা অনেক মহত্তের কাজ বলে আমি মনে করি।

সম্পর্কিত

মাত্রই প্রকাশিত