বিশ্ব ডেস্ক: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আকাশ থেকে আসা হুমকি রুখতে ইসরায়েলের মতো সাহায্য দরকার ইউক্রেনের। এ সময় তিনি ইসরায়েলের ওপর ইরানের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নিন্দাও করেছেন তিনি। সোমবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলেনস্কি আবারও মার্কিন কংগ্রেসকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করার আহ্বান জানিয়েছেন। মূলত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এটি স্থগিত রয়েছে। ফলে ইউক্রেনের বাহিনী পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ান সেনাদের নতুন করে আক্রমণের মুখে পড়ছে। রুশ বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পাশাপাশি ড্রোন থেকেও শহর ও অবকাঠামোগুলোতে প্রতিদিন হামলা হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি বলেছেন ইরানের পদক্ষেপগুলো সমগ্র অঞ্চল এবং বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে, ঠিক যেমন রাশিয়ার পদক্ষেপগুলো একটি বৃহত্তর সংঘাতের হুমকি দিচ্ছে। তাই আমার মতে সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য দুই দেশের মধ্যকার সুস্পষ্ট সহযোগিতাকে অবশ্যই বিশ্বের কাছ থেকে একটি দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হওয়া দরকার।
পরে রাতে দেওয়া নিজের এক ভিডিও ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্ব দেখেছে ইসরায়েল তার প্রতিরক্ষণে একা ছিল না। আকাশের হুমকিগুলোও তারা মিত্রদের মাধ্যমেই ধ্বংস করেছে।
তিনি বলেন, এবং যখন ইউক্রেন বলছে, মিত্ররা রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার বিষয়ে চোখ বন্ধ রাখতে পারে না, তখন এর অর্থ হলো- এই বিষয়ে কাজ করতে হবে এবং দৃঢ়ভাবে কাজ করা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের আকাশ ‘বাকশক্তি দিয়ে সুরক্ষিত নয়’।
তার ভাষায়, ‘এবং ইউক্রেনে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্যাকেজ পাওয়ার জন্য কয়েক মাস ধরে অপেক্ষা করছি। সত্য হচ্ছে- আমরা এখনও কংগ্রেসে ভোটের জন্য অপেক্ষা করছি। এতে করে সন্ত্রাসীদের আস্থা ও আত্মবিশ্বাসও কয়েক মাস ধরে বাড়ছে। নষ্ট করার মতো আর সময় নেই।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার মাইক জনসন রবিবার ইরানের হামলার পরে চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলে সহায়তা পাঠানোর বিষয়টি আরও সুরক্ষিত করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি আইনটিতে ইউক্রেন এবং অন্যান্য মিত্রদের জন্য সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে কি-না সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দেশটিতে আগ্রাসন চালানো শুরু করে রাশিয়া। সেই আক্রমণের প্রায় শুরু থেকেই রাশিয়াকে হাজার হাজার শাহেদ কামিকাজ ড্রোন সরবরাহ করেছে ইরান। এগুলো ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাকে নিঃশেষ করতে এবং সম্মুখ সমর থেকে অনেক ভেতরের ভূখণ্ডে অবকাঠামোগুলোতে আঘাত করার জন্য ব্যবহার করছে রাশিয়া।
অবশ্য জেলেনস্কি গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্রদের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশ প্রতিরক্ষা এবং অস্ত্রসহ ইউক্রেনের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য ‘রাজনৈতিক ইচ্ছা’ কাজে লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছেন।
গত শনিবার জেলেনস্কি আরও বলেন, জার্মানি ‘সঙ্কটজনক সময়’-এ ইউক্রেনে মার্কিন প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা রবিবার দেশটির জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলে এক বক্তৃতায় বলেছেন, আরও প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে সেগুলো হাতে আসার প্রক্রিয়ার ধীর গতির কারণে তিনি কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমার যথাযথ সম্মান এবং কৃতজ্ঞতা রেখেই বলছি- আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে একটি অতিরিক্ত প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি নেই যা তারা ইউক্রেনে পাঠাতে পারে?’