এস,এম,এ মোমেন,রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ বাবা-মায়ের দেয়া নাম মিজানুর রহমান। ‘অন্ধ মিজান’ বলেই এলাকায় সমধিক পরিচিত। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের
প্রত্যন্ত টাঙারিপাড়া গ্রামে মোন্তাজ-মোমেনা দম্পতির ঘরে ওর জন্ম। গ্রামের আর দশটা ছেলের মতো স্বাভাবিকভাবে সে চলতে পারতো না। কারণ, মিজান ছিলো জন্মান্ধ। চোখ অপারেশনের মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা দরিদ্র পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টারও কমতি ছিলনা।ফলে জীবনচলার মতো শিক্ষাটুকুও তার ভাগ্যে জোটেনি। বলতে গেলে অন্ধ মিজান ছিলো পরিবারের এক মস্ত বোঝা। দিন যায়, বড় হয় মিজান।
আজ সে ২৩ বছরের যুবক। দু’বেলা দু’মুঠো খেতে না পারলেও আত্মমর্যাদায় অটুট ছিলো মিজান। ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা অন্যের কাছে হাতপাতা ছিলো তার স্বভাববিরুদ্ধ। সে ছিল আত্মমর্যাদা সম্পন্ন স্বপ্নকামী সুপুরুষ। অন্ধত্ব তার স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারেনি। তাই হয়তো মনের আলোতে চলতে শুরু করে মিজান। আপন মেধা আর প্রত্যয়কে পুঁজি করে সে শুরু করে মোবাইল ফ্লেক্সিলোডের দোকান। হাতের পাঁচটি আঙুলের অদ্ভুত ছোঁয়ায় নিমিষেই ফ্লেক্সিলোড পাঠিয়ে দেয় কাস্টমারের ফোনে। প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী এ ছেলেটি একবার শুনেই ফোন নম্বর গেঁথে নেয় মনের খাতায়। তারপর আর বলতে হয়না কোনো নম্বর। শুধু নাম বললেই কাজ শেষ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, মোবাইলের কোন বাটনে কোন ডিজিট এটা সেটের উপর হাত রেখেই বলে দিতে পারি। বর্তমানে আমি ৫টি মোবাইল সেট ব্যবহার করছি। ফ্লেক্সিলোড ছাড়াও যে কোন মোবাইল ব্যাংকিংএর কাজগুলো করতেও আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে, আমার অন্ধ চোখদুটোর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা হলে আমি অপার আনন্দে পৃথিবীর আলো দেখতে পেতাম আর স্বাবলম্বী হয়ে দরিদ্র মা-বাবার ভরণপোষনের পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে চেপে নিতে পারতাম।
এ প্রসংগে রৌমারী উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, মিজান জন্মান্ধ কিন্তু আমাদের গর্বের বিষয় যে, সে কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ায়নি। মিজান এ সমাজের যুবকদের কাছে অনুকরণীয় বটে। আমরা অবশ্যই সাধ্যমতো তাকে সহযোগীতা করার চেষ্টা করবো। বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরানের সাথে। তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই আশ্চর্যজনক। মিজান আসলেই জন্মান্ধ এবং দরিদ্র পরিবারের ছেলে। বসতভিটার জন্য আমরা তার পরিবারকে কিছু খাস জমির ব্যবস্থা করে দিব। মুলতঃ প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী আত্মপ্রত্যয়ী জন্মান্ধ দরিদ্র মিজানের দু’চোখ প্রকৃতির আলোয় উদ্ভাসিত হোক, সে ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা,দানশীল ব্যক্তি,স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠনসহ সকলের সুদৃষ্টি পড়ুক -এ প্রত্যাশা সবার।
এসএম