সুভাষ চন্দ্র,উলিপুর(কুড়িগ্রাম)প্রতনিধি :
চেয়ারম্যান – মেম্বারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যার্থ শয্যাশায়ী ৮২ বছর বয়সী বৃদ্ধা কাচুয়ানী বেওয়া অবশেষে বয়স্ক ভাতার কার্ড পেলেন। রবিবার (৫ এপ্রিল) দুপুর বেলা উলিপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সামনে আনুষ্ঠানিক ভাবে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধা কাচুয়ানীর হাতে বয়স্ক ভাতার কার্ড তুলে দেন স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মশিউর রহমান, সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সরদার ও সংশ্লিষ্ট হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন বিএসসি।
প্রতিবেশী ও ভাগ্নের পরিবারের লোকজন জানান, প্রায় ২৪/২৫ বছর আগের কথা। করালগ্রাসী ব্রহ্মপূত্র নদের তীব্র ভাঙ্গনে ভিটেমাটি বাড়িঘর সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃসন্তান কাচুয়ানী বেওয়া দিশেহারা হয়ে পড়েন। কুল কিনারা না পেয়ে শেষ ভরসা হিসেবে আশ্রয় নেন জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বালারচর গ্রামে দিনমজুর ভাগ্নে আব্দুস সামাদের বাড়ীতে। ভাগ্নের অভাবী সংসার কি আর করার, সেখানেই একনা ঝুপড়ি ঘর তুলে ভিক্ষা করে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন কাচুয়ানী। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধা ভিক্ষা করতে গিয়ে প্রায় ৪ বছর আগে এক সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হন। চিকিৎসার অভাবে তখন থেকে চলাফেরার শক্তি হারিয়ে ভাগ্নের জায়গায় তোলা ঝুপড়ি ঘরের বিছানায় তার ঠাঁই হয়। এখানেই খেয়ে না খেয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছিল তার। এমন অসহায় অবস্থায় তিনি বয়স্ক ভাতার জন্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বারদের দ্বারস্থ হয়েও তাদের মন গলাতে পারেননি!! মরণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গৃহীত পদক্ষেপে এলাকায় ব্যাপক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। এর প্রভাব শয্যাশায়ী কাচুয়ানীর জীবনেও পরে। এক বেলা খাবার জোটে তো অন্যবেলা জোটে না।
সম্প্রতি স্থানীয় একজন সাংবাদিক কাচুয়ানী বেওয়ার মানবেতর জীবন-জীবিকাসহ বয়স্ক ভাতা না পাওয়ার কাহিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন। জনমনে দায়িত্বশীল স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, মেম্বারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এম এ মতিন এর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে দ্রুত ভাতা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের টনক নড়ে। রবিবার তাকে ভাতার কার্ড প্রদান করা হয়।##